ফেক আইডির বিপজ্জনক চক্র
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডনে থাকা কন্যা জায়মা রহমানের নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে অসংখ্য ভুয়া আইডি, পেজ এবং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় এসব অ্যাকাউন্ট খুঁজলেই পাওয়া যাচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্টে জায়মা এবং তার পরিবারের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ আইডিগুলোর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ছবি এডিট করে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করা হচ্ছে। কিছু আইডি থেকে রাজনৈতিক বিষয়ে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে, আবার কেউ কুৎসামূলক রিলস ও ভিডিও শেয়ার করছে। এসব বিভ্রান্তিমূলক পোস্টের উপর সাধারণ ব্যবহারকারীরা মন্তব্য করছেন, কেউ সমর্থন জানাচ্ছেন আবার কেউ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ফলে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে এবং বিএনপির নেতা-কর্মীরা এই পরিস্থিতিতে বিব্রত হচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কন্যা হওয়ায় কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
শুধু জায়মা রহমানই নয়, দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের উপদেষ্টা, বিখ্যাত ব্যবসায়ী, জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা এবং আলোচিত ব্যক্তিরাও ফেসবুকে ভুয়া আইডির শিকার হয়েছেন। এসব আইডি থেকে অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে পরিস্থিতি জটিল করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এখনই এসব ভুয়া আইডি বন্ধ করা না হয়, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এতে মানুষের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হবে এবং অবিশ্বাস তৈরি হবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, আগামী নির্বাচনের সময় এ ধরনের ঘটনা দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেসবুকে ‘জাইমা রহমান’, ‘ব্যারিস্টার জাইমা রহমান’, ‘জাইমা রহমান সমর্থক গোষ্ঠী’ - এসব নামে অসংখ্য পেজ এবং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব পেজে নিয়মিত রাজনৈতিক বিষয়সহ নানা ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করা হচ্ছে। সেখানে ব্যবহারকারীরা সক্রিয়ভাবে মতামত দিচ্ছেন এবং এসব আইডি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে বিএনপি জানিয়েছে, জায়মা রহমান বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন না। তার কোনো ব্যক্তিগত বা অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট নেই। তাই সাধারণ মানুষকে এসব ভুয়া আইডির সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জায়মা রহমানের নামে যে ফেসবুক আইডি ও পেজগুলো রয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুয়া। এসব আইডি তৈরির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জনগণকে বিভ্রান্ত করা। কিছু কুচক্রী মহল এসব ভুয়া আইডি খুলে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকার নামে ২০টি ফেক আইডি খোলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নায়িকা বলেন, “আমি নিজেই আমার ফেক আইডি দেখে বিভ্রান্ত হয়ে যাই। বারবার অভিযোগ করেও এর কোনো সমাধান পাইনি। ফেক আইডির কারণে আমার জীবন অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আমার কাছের লোকরাও আমাকে ভুল বুঝে দূরে চলে গেছে।” সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকে ফেক আইডি খোলা এবং ক্ষতিকর কনটেন্ট (মন্তব্য, সংবাদ, ছবি, ভিডিও, অডিও) প্রকাশ করা অপরাধ। এসব আইডি পরিচালনা এবং এমন কনটেন্ট শেয়ার করাও শাস্তিযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি এবং নাম ব্যবহার করে ভুয়া আইডি তৈরির ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এসব আইডি দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং জনমতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, দেশের আইনে সিমকার্ড কিনতে গেলে এনআইডি প্রদান বাধ্যতামূলক। কিন্তু ফেসবুকের নীতি অনুযায়ী, যে কেউ ১৩ বছরের ওপরে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। সরকার ফেসবুকের জন্য ১৮ বছর বয়সে অ্যাকাউন্ট খোলার এবং এনআইডি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta