প্রশিক্ষণে হারাল ১৯ হাজার কোটি
প্রতিবছর সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলেও এর তেমন কোনও কার্যকর ফলাফল দেখা যাচ্ছে না। প্রশিক্ষণ শেষে তারা অনেকেই অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়ে যান অথবা অবসরে চলে যান, যার ফলে অর্জিত জ্ঞান জনগণের উপকারে আসছে না। তাই এই প্রশিক্ষণগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং জনগণের অর্থের অপচয় রোধে বিশ্লেষকরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।
সূত্র অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকারের প্রশিক্ষণের বাজেট ৫ হাজার ২৭২ দশমিক ২৯ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৮৩২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এবং বাকি ১ হাজার ৪৩৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় রয়েছে। প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে দেশের ভিতরে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সংযুক্ত থাকে, যেখানে বিদেশে পরিচালিত প্রশিক্ষণগুলোকে শিক্ষাসফর বলা হয়। সরকারি কর্মকর্তারা জানান, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সাধারণত বিদেশে শিক্ষাসফর পছন্দ করেন, যেখানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রকল্প প্রস্তাবনায় শিক্ষাসফর অন্তর্ভুক্ত করে এবং বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সর্বোচ্চ ফোরামে তা অনুমোদন নেয়। তবে বর্তমানে শিক্ষাসফর কর্মসূচির আওতায় সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারীর কাছ থেকে কেনা পণ্য দেখার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করছেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিত বিদেশি প্রশিক্ষণের জন্য উন্নয়ন বাজেটে ব্যয়ের যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে পাঁচ বছরে প্রায় ১৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা প্রশিক্ষণে ব্যয় হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসফরের সংখ্যা কম ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রশিক্ষণের জন্য মোট ২ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৮০৩ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট থেকে এবং বাকি ৯৪০ দশমিক ১৮ কোটি টাকা অনুন্নয়ন বাজেট থেকে ব্যয় করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে সরকার উন্নয়ন বাজেটে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি এবং অনুন্নয়ন বাজেটে ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় ওই বছর থেকে বিদেশে শিক্ষাসফরের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের পরবর্তী অর্থবছরে সরকার প্রশিক্ষণের জন্য ৩ হাজার ৯১৪ দশমিক ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে, যার মধ্যে ২ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেট থেকে আসে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি তহবিলে বিদেশে শিক্ষাসফর নিষিদ্ধ থাকলেও মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলো এখনো বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তাব জমা দিচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ মার্চের প্রথম দিকে একটি প্রকল্প প্রস্তাবে বিদেশে শিক্ষাসফরের জন্য ২ কোটি টাকা চেয়েছিল। ২০২৪ সালের অক্টোবরে কৃষি মন্ত্রণালয় সিলেটে ভূপৃষ্ঠের পানি ব্যবহারের প্রস্তাবিত প্রকল্পে শিক্ষাসফরের জন্য ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta