বেনারসিপল্লিতে অন্য ছবি
এক সময়ের প্রাণবন্ত বেনারসিপল্লিতে এখন ঈদ আনন্দের অনুপস্থিতি। প্রতি ঈদে যেখানে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা হতো, এখন সেখানে তা বন্ধ হয়ে গেছে। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামের বেনারসিপল্লিতে ৭০টি পরিবার বেনারসি শাড়ি তৈরি করত। তবে এখন সেই পেশা থেকে প্রায় সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, একমাত্র মো. ওয়াহিদ রানা ছাড়া। জানা যায়, বগুড়ার শেরপুরের ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামের বেনারসিপল্লি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন কোনো কারিগর তৈরী হচ্ছে না এবং অর্থনৈতিক অসুবিধা থাকায় তাঁতিরা শাড়ি তৈরি বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে প্রতি ঈদে লাখ লাখ টাকার বেনারসি শাড়ি তৈরি হতো। আর্থিক সংকট এবং সরকারি সহায়তার অভাবে ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি ধ্বংসের পথে। তাছাড়া ভারতীয় শাড়ি বাজারে আসার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এই পল্লির তাঁতিরা। এখন অনেকেই ভ্যান-রিকশা চালিয়ে অথবা রাজমিস্ত্রি, টাইলসের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিছু তাঁতি আবার সবজি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামে ৭০টি তাঁতি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে একটি তাঁত কার্যরত রয়েছে। কয়েকজন পুরনো তাঁত স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন, কিন্তু মেশিনগুলো জীর্ণ ও মাকড়সার জালে আটকে আছে। কয়েক বছর আগে যেখানে বেনারসি তাঁতের শব্দে মুখরিত ছিল, এখন সেই গ্রামটি নিস্তব্ধ।
বেনারসি তাঁতশিল্পের মালিক মো. ওয়াহিদ রানা জানান, এক সময় বেনারসিপল্লিতে শাড়ির চাহিদা এত বেশি ছিল যে ঢাকার শো-রুম থেকে আগাম টাকা দিয়ে অর্ডার করা হতো। বিশেষত দুই ঈদ এবং পূজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। কিন্তু কিছু বছর ধরে ভারতীয় শাড়ি আসার ফলে বেনারসি শাড়ির কদর কমে যাওয়ায় একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে যায়। বেকার হয়ে পড়া কারিগররা ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। তিনি তার কারখানা চালু রেখেছেন, তবে ঈদের পরে তিনি এটিও বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছেন।
তিনি আরও জানান, সরকারি সহায়তা থাকলেও প্রকৃত তাঁতিরা সেই সুবিধা পাচ্ছেন না। ভুয়া তাঁতিরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে, অথচ প্রকৃত তাঁতিরা ঋণও পাচ্ছেন না। ফলে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে যদি প্রকৃত তাঁতিরা সরকারি সহায়তা পায়, তাহলে বেনারসিপল্লি আবারও পুনরুদ্ধার হতে পারে এবং তারা তাদের পুরোনো পেশায় ফিরে যেতে পারে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta