উদ্বোধন হল যমুনা রেলসেতু: কমবে দুর্ভোগ, বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য
যমুনা নদীর ওপর নির্মিত ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন বিশিষ্ট স্বপ্নের যমুনা রেলসেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় টাঙ্গাইলের ইব্রাহিমাবাদ রেল স্টেশনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতুর উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা সিনচি, জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক মি. ইতো তেরুয়াকি, রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি। অনুষ্ঠান শেষে টাঙ্গাইলের ইব্রাহীমাবাদ স্টেশন থেকে একটি ফুল দিয়ে সাজানো বিশেষ ট্রেন তিন মিনিটের মধ্যে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ পার হয়ে সেতুটির কার্যক্রম শুরু হয়। সেতুর উদ্বোধন বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ, অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেতুর পশ্চিম প্রান্ত সয়দাবাদ স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ১৬ হাজার ৭শত ৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকার ব্যয়ে নির্মিত এই সেতু ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের রেলপথের সময় কমাবে ৩০ মিনিটেরও বেশি। এই সেতু দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ট্রেন ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি অর্জন করতে সক্ষম হবে। সেতু পার হতে লাগবে মাত্র ৩ মিনিট, যেখানে আগে যমুনা সেতু পার হতে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট লাগতো। শুধু যাত্রী ট্রেন নয়, মালবাহী ট্রেনও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা সেতুর ৩শ’ মিটার উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ২৯ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২১ সালে পাইলিংয়ের মাধ্যমে সেতুর কাজ শুরু হয়। সেতুটিতে ৫০টি পিয়ার এবং ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। সেতুটির দুদিকে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে মোট রেললাইন ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার হয়েছে। সেতুটির দুই প্রান্তে আধুনিক স্টেশন, সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
জাপানি প্রতিষ্ঠান ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চারসহ পাঁচটি জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং ৭ হাজার কর্মী একত্রে ৪ বছরের পরিশ্রমে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সেতুটির নির্মাণে উন্নতমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেতুর শত বছরের গ্যারান্টি রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ফাহিমুল ইসলাম বলেন, শিগগিরই সেতুর দুই প্রান্তে ডাবল রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে, যাতে সেতুটির পুরো সুবিধা জনগণ পেতে পারে। তিনি আরও নিশ্চিত করেন যে সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম হয়নি।
প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, দুর্ঘটনা ছাড়া সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করায় তারা গর্বিত। সেতুটির মাধ্যমে ৩৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে এবং সময়ের সাথে সাথে ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে, যা মহাসড়কের উপর চাপ কমাতে সহায়তা করবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যও বৃদ্ধি পাবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু জানান, রেলসেতুর মাধ্যমে ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে তিনি ডাবল রেলপথ নির্মাণের দাবি জানান, কারণ বর্তমানে সেতুর দুই পাশের রেলপথ ডাবল না হওয়ায় সেতুর পূর্ণ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না।
শাকিল/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta