ইন্ডিয়া টুডে এর প্রতিবেদন
ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে হওয়া সহিংস ঘটনায় ৩০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এই ঘটনার পর রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বলেছেন, সহিংসতা পরিকল্পিত ছিল। তবে বিরোধীরা সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছে, বলছে যে পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের ডাবল ইঞ্জিন সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি মহারাষ্ট্র থেকে সরানোর দাবিতে সোমবার সন্ধ্যায় নাগপুরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, এবং এর পর নাগপুরের বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়।
নাগপুরের মহল এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে ৬০ জনেরও বেশি আটক হয় এবং প্রায় ৩০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
নাগপুরের সহিংসতা নিয়ে বিধানসভায় বক্তব্যে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নাগপুরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল বিক্ষোভ করেছে। গুজব ছড়ানো হয়েছিল যে ধর্মীয় প্রতীক পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত হামলা বলেই মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কেউ আইনশৃঙ্খলা নিজের হাতে নিতে পারে না।
মুখ্যমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পুলিশের ওপর আক্রমণ সহ্য করা হবে না, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডেও এ সহিংসতাকে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব ঠাকরে বিজেপি, একনাথ শাইনের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা এবং অজিত পাওয়ারের এনসিপি নিয়ে গঠিত মহাযুতি সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। নাগপুরের সহিংসতা প্রসঙ্গে উদ্ধব ঠাকরে বলেছেন, আমি মুখ্যমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নই, এর পিছনে কে রয়েছে তা মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। কারণ আরএসএসের সদর দপ্তর সেখানে (নাগপুর)। মহারাষ্ট্রে একটি ডাবল ইঞ্জিন সরকার রয়েছে, যদি তা ব্যর্থ হয়, তবে তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
কংগ্রেস নেত্রী রেণুকা চৌধুরী মহারাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভায় একটি স্থগিতাদেশ নোটিশ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সংসদে নাগপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য কিছু কার্যক্রম স্থগিত করা হবে। নাগপুরে ৩০০ বছর ধরে কখনও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি।
এই পরিস্থিতির সূত্রপাত হয় সম্ভাজি নগর থেকে, যা আগে আওরঙ্গবাদ নামে পরিচিত ছিল। এই শহরের খুলদাবাদ এলাকায় সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি রয়েছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমাধি সরানোর দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি এই দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। গত সোমবার নাগপুর শহরের মহল এলাকায় বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে জমায়েত করে। সেখানেই আওরঙ্গজেবের ছবি এবং সবুজ কাপড়ে ঢাকা একটি প্রতীকী কবরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
অগ্নিসংযোগের পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ও দোকানে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও আক্রান্ত হয়। এই সহিংসতায় অন্তত ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন, পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta