আমতলীতে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে ১৮ জন আহত
বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় তিন দিনব্যাপী ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির সময় একটি মাজারে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, বলে অভিযোগ করেছেন মাজার কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (১৬ মার্চ) রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সেখানে চলছিল ভাঙচুর ও লুটপাট সহ অগ্নিসংযোগ।
রাতের দিকে তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে মাওলানা মুফতি মো. ফারুক হোসেন এবং মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের মধ্যে গান বাজনা নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে হাতাহাতি ও সংঘর্ষ হয়, যার পরবর্তী ঘটনাটি ঘটেছে।
বরগুনা আমতলী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে অবস্থিত 'ইসমাইল শাহ বাবা মাজার' এর কাছাকাছি স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও তিন দিনব্যাপী মাজারে বার্ষিক ওরস আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল। মাজারের সামনে মঞ্চ এবং বড় তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিল, এবং ভক্তদের জন্য শামিয়ানা দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল।
এদিকে, মাজারের ওরস বন্ধ করতে তৌহিদি জনতা হাজার হাজার লোক নিয়ে লাঠি হাতে মিছিল বের করে। মিছিলটি মাজারের সামনে পৌঁছালে, আশেপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ মিছিলে যোগ দেয় এবং মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
মাজারের বিভিন্ন আসবাবপত্র, ঘরের টিন এবং দেয়ালের ইট খুলে ফেলা হয়। বিক্ষুব্ধ লোকজন বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তৌহিদি জনতার আগুন দেয়ার ফলে মাজারের চারপাশ ঘিরে অবস্থান নেয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। ভাঙচুরকারীরা অভিযোগ করেছে যে, মাজারে গান বাজনা, মাদক সেবন এবং অশ্লীল কর্মকাণ্ড চলছিল।
স্থানীয় জনতা এবং মুফতি ওমর ফারুক জিহাদী অভিযোগ করেছেন, ১৯৯৬ সালে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল মাজারটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং শুরু থেকেই ওরসের নামে বিদাত ও শিরক কার্যক্রম চলছিল। বাধা দিলে তার মুরিদান ও আলেম-ওলামাদের ওপর হামলা চালানো হয়, যাতে ১০-১২ জন আহত হন। তারা আরও জানান, মাজারের লোকজন প্রতিবছর চৈত্র মাসে ঢোল, তবলা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গান, বাজনা এবং জিকির করেন।
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল জানান, এই ধরনের ঘটনা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতো, কিন্তু তা না করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাজারে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে। হামলায় একাধিক মুরিদান গুরুতর আহত হয়েছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শফিউল আলম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম জানান, মাজারে তৌহিদি জনতা হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। তৌহিদি জনতার মধ্যে উত্তেজনা থাকায় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। পরে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
শাকিল/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta