বাহাদুরের জন্য নয় লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হলো।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ৫১৭ বছরের পুরনো গোপীনাথপুর দোল পূর্ণিমার মেলায় জমে উঠেছে ঘোড়ার বাজার। সেখানে হাঁকডাক, দরদামে পুরো পরিবেশ মুখরিত হয়ে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা বিভিন্ন দামে দরকষাকষি করছেন। যদি দাম সাধ্যের মধ্যে মেলে, তখনই বিক্রি হচ্ছে। মেলার এই ঘোড়ার বাজারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ভারতীয় মাড়োয়ারি তাজি জাতের ঘোড়া, যার নাম বাহাদুর। বাহাদুরের দাম ধরা হয়েছে নয় লাখ টাকা। এই দাম হাঁকছেন মালিক আব্দুল মজিদ, যিনি নওগাঁর ধামইরহাট থেকে ঘোড়াটি মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন।
মেলায় আসা অন্যান্য ঘোড়াগুলোর মধ্যে রয়েছে পঙ্খিরাজ, বাহাদুর, বিজলি, কিরণমালা, বাংলার রানী, সুইটি, ভারতীয় তাজীসহ নানা নামের বাহারি ঘোড়া। মেলায় ঘোড়া দেখতে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় জমেছে। তাদের গতিবিধি ও বুদ্ধিমত্তা ঘোড়ার নামের সার্থকতা প্রমাণ করছে। ক্রেতাদের মধ্যে পছন্দের ঘোড়া কেনার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।
মেলার আয়োজকদের মতে, সারা দেশে একমাত্র গোপীনাথপুর দোল পূর্ণিমা মেলায় ঘোড়া বেচাকেনার হাট বসে। তাই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এখানে আসেন। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমার সময়ে এক মাসব্যাপী এ মেলা চলে। মেলার প্রথম ১০ দিনই পশুর মেলা হয়, তবে পুরো মাস ধরে অন্যান্য কার্যক্রম চলে। মেলার কয়েকদিন আগে থেকেই ঘোড়া ব্যবসায়ীরা এখানে অবস্থান শুরু করেন। মেলায় ঘোড়া ছাড়াও মহিষ, গরু, ভেড়া ও ছাগলের বেচাকেনা হয়। ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় গোপীনাথপুরের ঐতিহ্যবাহী মেলা এখন মুখরিত। দরদাম শেষে ঘোড়াগুলোকে পাশের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাদের দৌড় দেখানো হয়। এবারের মেলার মূল আকর্ষণ ভারতীয় তাজী জাতের বাহাদুর ঘোড়া, যার দাম হাঁকা হয়েছে নয় লাখ টাকা।
বাহাদুরের মালিক আব্দুল মজিদ জানান, ঘোড়াটির বয়স পাঁচ বছর এবং এটি ভারতীয় মাড়োয়ারি তাজী জাতের। খুব দ্রুত দৌড়াতে সক্ষম এই ঘোড়া বিভিন্ন ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও জিতেছে। খয়েরি রঙের লাল-সাদা ঘোড়াটির যত্ন তিনি নিজেই নেন। এবারের মেলায় এর দাম তিনি নির্ধারণ করেছেন নয় লাখ টাকা, তবে এখন পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখ টাকায় এর দাম উঠেছে।
নীলফামারীর ডোমার থেকে আবুল হোসেন মেলায় ঘোড়া কেনার জন্য এসেছেন এবং তিনি বাহাদুরের দাম হিসেবে সাড়ে সাত লাখ টাকা প্রস্তাব করেছেন। আরও কিছু ঘোড়া দেখার পর তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
ঘোড়ার সওয়ারি ও ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, পূর্বপুরুষরা বহু বছর আগে এই মেলায় ঘোড়া কেনা-বেচা করতেন, এবং তাদের সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারাও এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। একসময় ঘোড়ার হাট এবং ঘোড়াদের আকর্ষণ করতে বিশাল মাঠ ছিল, তবে বর্তমানে সেই স্থান সংকুচিত হয়ে গেছে, যার কারণে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম বলেন, ‘গোপীনাথপুরের মেলাটি অত্যন্ত পুরনো একটি মেলা। এখানে বড় ধরনের ঘোড়া এসেছে বলে শুনেছি। মেলাটি ঘিরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সবরকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রমজানের পবিত্রতা ও নিরাপত্তার জন্য বিনোদনমূলক যাত্রা বা সার্কাসের অনুমতি দেওয়া হয়নি। যেকোনো বিশৃঙ্খলা ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেলাটি আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি।’
শাকিল/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta