দলগুলোর জন্য ১২০ পয়েন্ট
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং দেশের সার্বভৌমত্বের অভ্যন্তরীণ রক্ষক। এটি আমাদের গৌরবের মূর্ত প্রতীক এবং অহংকারের উৎস। এজন্যই এই বাহিনীকে বিতর্ক থেকে মুক্ত রাখা আমাদের প্রধান কর্তব্য। সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কের সম্মুখীন করলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। আমাদের দেশ ও তার সমৃদ্ধি সব সময় আগে আসা উচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের গৌরবের প্রতিনিধিত্বকারী সশস্ত্র বাহিনীকে নানা উপায়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন গোষ্ঠী বাহিনী সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছে এবং অসত্য গুজব প্রচার করছে। বিশেষত, সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমের অযাচিত আলোচনা বাহিনীর মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে, যা একধরনের অবমূল্যায়ন। সেনাবাহিনী এবং এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ তুলতে তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি করা দেশের জন্য মোটেও লাভজনক নয়। এসব বিতর্ক আমাদের ঐক্যকে দুর্বল করবে এবং সার্বভৌমত্বে আঘাত আনতে পারে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী একটি বিশ্বস্ত পেশাদার বাহিনী হিসেবে পরিচিত এবং এটি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। অক্টোবরে সেন্ট্রাল আফ্রিকার বিদ্রোহ দমনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান প্রশংসিত হয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা চলছে। আমাদের বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে, যা আমাদের দেশের জন্য এক বিরাট অর্জন। এটি কেবল সেনাবাহিনী বা অন্য বাহিনীর সাফল্য নয়, বরং দেশের পুরো গৌরব।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সবসময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে এসেছে, বিশেষত দুর্যোগ বা রাষ্ট্রীয় সংকটে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তারা জনগণের পক্ষে কাজ করেছে। জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তবে বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমেও সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক বিবিসিতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে অযাচিত মন্তব্য করেছেন, যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য এবং দায়িত্বের বাইরে। ভলকার তুর্কের মন্তব্যে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি ভুল বার্তা দিতে পারে।
আইএসপিআর তৎক্ষণাৎ একটি বিবৃতি জারি করে এই মন্তব্য অস্বীকার করেছে। তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী কোনো ধরনের ইঙ্গিত বা বার্তা সম্পর্কে অবগত নয় এবং সেনাবাহিনী মানবাধিকার রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা মেনে চলে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সব সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, এবং এ ধরনের বিতর্ক তাদের পেশাদারি ও দৃঢ়চিত্ত ভূমিকার প্রতি প্রশ্ন তুলবে।
তবে এটি স্মরণ রাখা জরুরি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনোই জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতন কিংবা ২০০৭ সালের রাজনৈতিক সংকটে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল একান্ত ইতিবাচক। ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত দায়িত্বশীল ছিল। সশস্ত্র বাহিনী দেশের সব দুর্যোগে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই অদম্য সেবা ও দায়িত্বের কারণে বাংলাদেশের জনগণ তাদের প্রতি গভীর আস্থা রাখে। সুতরাং, আমাদের দায়িত্ব হলো সশস্ত্র বাহিনীকে সব বিতর্ক থেকে দূরে রাখা এবং এর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার।
অদিতি করিম : নাট্যকার ও কলাম লেখক
Email : [email protected]
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta