বিনা ভোটে পাঁচ বছরের হাইপ
রোড বা ম্যাপ না দেখা গেলেও, ‘ওই দেখা যায় তাল গাছ’-এর মতো নির্বাচন স্পষ্ট হচ্ছে। সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে দেশ নির্বাচনের প্রস্তুতিতে প্রবেশ করেছে। হুইসেল বাজলেই ডিসেম্বর বা জুন লক্ষ্য করে নির্বাচন শুরু হতে পারে।
বা তা কিছুটা আগে বা পরে হতে পারে। এমন নির্বাচনী পরিবেশে ড. ইউনূস সরকারের আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার পরিকল্পনা সামনে এসেছে। তবে, প্রশ্ন উঠছে—এটি কি তাঁকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য? নাকি তাঁর ইজ্জত ও সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য?
ড. ইউনূস যখন প্রথম নির্বাচনের সময় নিয়ে কথা বলেছিলেন, তখন ডিসেম্বরের সম্ভাবনা ছিল। সেনাপ্রধান ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আশা করেছিলেন, যা মার্চ পর্যন্ত গড়াতে পারতো। তবে, প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং থেকে সেটি টেনে জুনে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা ছিল। আবার প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যদি মিনিমাম সংস্কার হয়, তাহলে ডিসেম্বর; আর ম্যাক্সিমাম সংস্কার হলে জুন। এই কথাগুলির মধ্যে দিয়ে ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত নির্বাচনের পথ স্পষ্ট হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে তা আরও কিছু মাস পিছিয়েও যেতে পারে, তবে কোনো দল বা মহলের তেমন আপত্তি থাকবে না। কিন্তু ড. ইউনূস সরকারের আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখার পরিকল্পনা বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। এটি কারা প্রস্তাব করছে? তাদের উদ্দেশ্য কী?
ড. ইউনূস এখনও সরাসরি বা ইঙ্গিতে এই পাঁচ বছরের ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেননি। বরং তিনি তাঁর পূর্বের পেশাগত জীবনের সহকর্মীদের কাছে দ্রুত ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে কিছু উপদেষ্টা এবং তাঁর সমর্থকরা এমন মন্তব্য করেছেন। একজন উপদেষ্টা বলছেন, জনগণ চায়, তারাই আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকুক।
পরে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, এটি তাঁর মতামত নয়, এটি জনগণের কথার প্রতিফলন। এতে বিষয়টা কিছুটা হালকা হয়। তবে আরেকজন উপদেষ্টা বলেছেন, তাঁরা নির্বাচিত। এর মানে কি? কখন নির্বাচন হলো? ভোট কিভাবে হয়েছে? এমন প্রশ্ন উঠছে। এসব কথা খুবই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।
ড. ইউনূসকে ক্ষমতায় দেখতে চাইতে পারেন। এতে আক্রমণের কিছু নেই। কিন্তু তাঁকে জনগণের সমর্থন নিতে বলার প্রবণতা বাড়ছে। কিছু মানুষ বোধহয় এই উগ্রতায় নিজেদের চিন্তা প্রকাশ করছে। শেখ হাসিনা ১৫-১৬ বছর অন্যায় করেছেন, ড. ইউনূসও ১৫-১৬ বছর ক্ষমতায় বসে তা সঠিক করতে চান—এমন ধারণাও তৈরি হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন। আওয়ামী লীগ বা তার অনুসারীরা ছাড়া কেউ তাঁর বিপক্ষে নয়। জাতীয়তাবাদী শক্তি, দেশপ্রেমিক ডান-বাম, ছাত্র-তরুণ সবাই তাঁর সমর্থক। কেউ মুগ্ধ, কেউ অভিভূত। তাঁর নেতৃত্বে দেশের উন্নতি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর সমর্থনে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু যদি কেউ তাঁকে ক্ষমতায় দেখতে চান, তা হলে তাঁকে অবশ্যই জনগণের ভোট নিতে হবে। এটি তাঁদের জন্য সম্মানজনক হবে।
তবে যদি তাঁরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে, দল গঠন করে ভোটে লড়াই করতে চান, তাহলে এটি সম্মানের ব্যাপার হবে। তবে নির্বাচনের বাইরে পাঁচ বছরের হাইপ তোলা, বিনা ভোটে ক্ষমতায় বসানোর চিন্তা কী সঠিক? নাকি এটি তাঁর সম্মান নষ্ট করার উদ্দেশ্যে?
এই বিষয়টি সরকারের বা ড. ইউনূসের পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। যদি এই ধরনের আন্দোলন অব্যাহত থাকে, তাহলে এটি তাঁর সম্মান ও অর্জন ধুলায় মেশাতে পারে। এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এখন নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বরের সময়সীমায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও এই সময়রেখা পরিবর্তন হতে পারে, তবুও সময় খুব কম রয়েছে। দ্রুত নির্বাচন না হলে, আগামী মাসেও ভোট সম্ভব। তবে যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয়, সেটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন করেছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে তারা কিভাবে আস্থা রাখবে? নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীল সরকার গঠন করা না হয়, তাহলে দেশের জন্য তা বিপজ্জনক হবে।
লেখক : মোস্তফা কামাল
সাংবাদিক-কলামিস্ট
ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta