ছাত্রদের রাজনীতি এবং জনগণের প্রত্যাশা
৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছাত্রদের হাতে চলে এসেছে, তবে এর সমালোচনা এখনও চলছেই। বর্তমান অবস্থায় ছাত্ররাই দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট এমনই যে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ছাড়া অন্য কোন দলের কোনো স্থান নেই। শেখ হাসিনার শাসনকালে বিএনপিকে চেপে ধরা এবং জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা ৩৬ জুলাইয়ের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হলেও শেষ পর্যন্ত কেউই সফল হয়নি।
ফ্রান্সের ব্রুকিনাফাসোর রাজনীতি ত্রিশ বছর বয়সী তরুণ ইব্রাহিম ট্রাওরোর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে, তেমনই বাংলাদেশের রাজনীতিতেও তরুণ নেতারা যেমন আসিফ ও নাহিদরা ক্ষমতার কেন্দ্রে আছেন। ইতিহাসের কঠোর সত্য হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল এবং শেখ হাসিনাও প্রাণভয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
শেখ হাসিনা কখনোই ভাবেননি যে, তাকে বিতাড়িত হতে হবে, ঠিক তেমনি তরুণরা ভাবেনি যে, তাদেরকেই সরকার গঠন করতে হবে। তবে, রাজনীতিতে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং দেশ শাসনে অংশ নিতে হলে ভোটের মাধ্যমেই আসতে হবে। আর জনগণকে উপেক্ষা করে কোন দলই ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, এটি আওয়ামী লীগের শাসন থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের আন্দোলন প্রথমে কোটা ও মেধা ভিত্তিক দাবি নিয়ে শুরু হলেও তা শেষমেশ এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলনে দেশের জনগণ, বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে পরবর্তীতে ছাত্র রাজনীতির মধ্যে কিছু বিভাজন দেখা যায় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রান্তিক করে রাখা হয়, যা তাদের অবদানকে অস্বীকার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে।
২০২৪ সালের আন্দোলন এখন ঝুঁকির মধ্যে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে কিছু অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এখনও বিপর্যস্ত।
সমন্বয়ক নামে বিভিন্ন মিছিল ও সভাগুলোতে বিশৃঙ্খলা সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা লাঞ্চিত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা আর সংগঠিত হতে পারছে না।
ছাত্র আন্দোলন নিয়ে জনগণের উচ্চ প্রত্যাশা সেভাবে পূর্ণ হয়নি। বিশেষত, জুলাই আন্দোলন নিয়ে জনগণের যে আশা ছিল, তা এখনও কার্যকরভাবে পূর্ণ হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে।
শিক্ষার্থী, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি (ইংরেজি বিভাগ)
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta