শহীদ পরিবারের প্রত্যাশা প্রধান উপদেষ্টার কাছে
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্বের মেয়াদ প্রায় আট মাস শেষ হতে চলেছে। এই সময়টিতে বাংলাদেশ নানা সংকট ও সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে। ঈদুল ফিতরের ছুটির পর আবারও কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে দেশ। এবারের ঈদ ছিল স্বাধীনতার দ্বিতীয় উপলক্ষ্যে উদযাপিত ঈদ। উৎসবটি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের মূল্য ছিল সহনীয়, আর সাধারণ মানুষ ঝামেলাহীনভাবে ঈদযাত্রা সম্পন্ন করেছে। ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় মানুষ তার প্রিয়জনদের সঙ্গে একত্রিত হতে পেরেছে, এবং পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। এটি বাংলাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ছিল ভালো, এবং বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সমস্ত বিবেচনায়, ঈদ এবার সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন দেশের উৎসব হিসেবে পালিত হয়েছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর উপদেষ্টাদের ধন্যবাদ জানানো উচিত। তারা একযোগে মানুষের জন্য একটি আনন্দময় ঈদ উৎসব নিশ্চিত করেছেন। সব মিলিয়ে, এবারের ঈদ ছুটিতে মানুষ যেন স্বাধীনতা উপভোগ করছে।
তবে, এই আনন্দ এবং স্বাধীনতার মধ্যে কিছু মানুষের জন্য রয়েছে দুঃখ এবং শোক। জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া মানুষগুলোর পরিবারের জন্য এবারের ঈদ ছিল একেবারেই বিষাদময়। যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছে, তারা আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। যে মানুষটি তাদের সঙ্গে ছিল, তাদের জীবনের আনন্দ এবং প্রেরণা ছিল, সেই মানুষটি আর তাদের কাছে নেই। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? কিন্তু এই পরিবারগুলোর কথা আমরা ঈদের আনন্দের মধ্যে কতটা স্মরণ করছি? শহীদ পরিবারগুলোকে আমরা কী দিতে পেরেছি? রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ ছিলেন সেই বিপ্লবের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তিনি পরিবারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার পরিবার এখন অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি। তার পরিবারের অবস্থা কি হবে?
মো. ফারুক চট্টগ্রামের ষোলশহরে একটি চেয়ারের দোকানে কাজ করতেন। তিনি ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার জীবনও দেশের মুক্তির জন্য উৎসর্গিত হয়েছে। তার পরিবারও এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে গেছে।
ঢাকার সিয়ামও পরিবারকে উপেক্ষা করে দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হন। এখন তার পরিবার স্বপ্নহীন ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। এই শহীদ পরিবারের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে ঢাকা।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, এসব শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি আমাদের দায়িত্ব কি যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতি এবং গুরুত্ব প্রকাশ করেছেন। তিনি 'জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন' গঠন করেছেন, এবং ঈদের আগে ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কি শোক মুছে ফেলা সম্ভব? এর দ্বারা পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎও নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ শ্রমিক ছিলেন। তারা হয়তো পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। রংপুরের আবু সাঈদ সেই উদাহরণের একটি।
এখন তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তবে এই সহায়তা তাদের দীর্ঘদিন চলতে পারবে না। শিগগিরই আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে, এবং তারপর তাদের কী হবে? সরকারের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারগুলোর জন্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমরা জানি, সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই বেসরকারি খাতকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানানো উচিত।
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত। যদি সরকার কোন ধরনের আর্থিক সংকটে থাকে, তবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। এভাবে একটি বৃহত্তর ফান্ড তৈরি করা সম্ভব হবে, যা শহীদ পরিবারগুলোর জন্য স্থায়ী আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। আমরা মনে করি, সরকার যদি বেসরকারি খাতের মাধ্যমে এই উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে শহীদ পরিবারগুলোকে একটি স্থায়ী নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি শহীদ পরিবারগুলোর প্রতি যে প্রগাঢ় ভালোবাসা এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন, তার জন্য আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু শুধু সম্মান জানানোর চেয়ে, তাদের জন্য কিছু স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta