মানুষের প্রকৃত আয় কমছে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ। আপনাদের দলকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সাত মাস পর এর প্রতি সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আপনাকে প্রশংসা করি। বাংলাদেশ প্রতিদিন এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যারা মাইনাস টু ফর্মুলার প্রবক্তা, যারা এক-এগারো সৃষ্টির জন্য দায়ী, তারা এখনো বিএনপিকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বাধা দেওয়ার জন্য তারা নতুন সঙ্গী বানিয়েছে। আগে তারা ইসলাম, দাড়ি-টুপি, হিজাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাত, কিন্তু এখন তাদেরই সাথে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারীরা। তবে আপনার জন্য দুঃসংবাদ, এক-এগারো ষড়যন্ত্রকারীদের অনেক সিনিয়র নেতা এখন ভালোবাসেন। অনেক নেতা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিজেদের সুশীল হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসবে, তত তাদের ষড়যন্ত্র বাড়বে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে এসব ষড়যন্ত্র বুঝতে পারছেন, দেশের নেতারা কি এগুলো বুঝতে পারছেন?
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করেছে যার নাম 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশন'। সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এই কমিটি প্রথিতযশা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এ সরকার বুঝতে পেরেছে, জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে মতৈক্য জরুরি। কমিশনের উদ্দেশ্য হলো সংস্কার, নির্বাচন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড বিষয়ে একটি লিখিত দলিল প্রস্তুত করা। আগামী দিনের বাংলাদেশকে গাইডলাইন দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এটি কাজ করছে। বর্তমান সংকটের সমাধানে ঐকমত্য গড়ার চেষ্টা চলছে, তবে আমাদের মধ্যে এখনো দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অনেকেই এখনো পাকিস্তান এবং ভারতপ্রেমে বিভক্ত। মাঠে ক্রিকেট খেলা চলাকালে পাকিস্তান ও ভারতের পতাকা উড়ানোর ঘটনা সেই বিভক্তিরই প্রতিফলন। তবে, এই ঐকমত্য প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশের প্রতি প্রেম এবং একতার প্রতিষ্ঠা। যদি দেশের প্রতি ভালোবাসা না থাকে, তবে ঐকমত্য দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দিতে পারবে না।
গত ১৩ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করেন। সফরের সময় তিনি ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সংস্কার ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেন। সফর শেষে তিনি জানান, নতুন বাংলাদেশে সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, সেখানে জাতিসংঘ প্রধান সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত। জাতিসংঘকে বাংলাদেশ সংস্কার বিষয়ে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সাংবাদিকরা পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে জানতে চান, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে কি না? উপদেষ্টা জানান, এ বিষয়ে জাতিসংঘের সাথে আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন বিতর্ক চলছে, নির্বাচনের আগে সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার, কোনটা আগে? সরকার ফ্যাসিস্টদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু এ ব্যাপারে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে না।
বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ, পুলিশকেও মান্য করা হচ্ছে না। রিকশাচালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করছে। মব সংস্কৃতি বন্ধ করা যাচ্ছে না এবং ধর্ষণের মতো নৃশংস অপরাধ বেড়েছে। নারীরা ও শিশুরা দিনদিন বেশি অসুরক্ষিত হয়ে পড়ছে। দেশে অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঈদের আগে সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ১৭ মার্চ পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি পুলিশ বাহিনীকে শক্ত থাকতে, আইন মান্য করে জনগণের বন্ধু হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কাজের চেয়ে কথাই বেশি বলছেন, তবে জনগণ এখন কাজ দেখতে চায়, কারণ কথা নয়, কাজই শেষ পর্যন্ত ফল বয়ে আনে।
দেশবাসীর কাছে এখনো অনেক কিছু স্পষ্ট হয়নি। যারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন, তারাও কিছু বুঝতে পারছেন না। সম্প্রতি এক রাজনৈতিক দলের ইফতার পার্টিতে এক সাবেক আমলা এক নেতা থেকে জানতে চান, '৫ আগস্টের আগে আমরা দাদাদের কাস্টডিতে ছিলাম, এখন কাদের কাস্টডিতে আছি?' অন্যজন বলেন, 'আমরা হলাম গরিবের সুন্দরী বউ, কখনো ভারতের, কখনো আমেরিকার, কখনো চীনের।' এ ধরনের অস্থির পরিস্থিতি দেশে চলছে এবং রাজনৈতিক নেতারা, ব্যবসায়ীরা, আমলারা কেউই কিছু জানেন না। তাহলে জানবে কে?
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta