প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে এখনো ডলার সংকট রয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেশি এবং খেলাপি ঋণও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি রয়েছেন, বিশেষ করে আর্থিক খাতে। নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকায় উদ্বেগ বাড়ছে। এর মধ্যেই এলডিসি থেকে উত্তরণের আলোচনা চলছে এবং সরকার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তবে প্রস্তুতির ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব বিষয় গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। রীতি অনুযায়ী, গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজেট-পূর্ব আলোচনা সভার আয়োজন করেন অর্থ উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এমন একটি বাজেট দিতে চাই যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনুকূল হবে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। কিছু খাতে অনলাইন কার্যক্রমের ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। সামগ্রিকভাবে বাজেটটিকে ব্যবসাবান্ধব করতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেট বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং চাই ব্যবসাবান্ধব বাজেট ও করনীতি, যাতে বিনিয়োগের পরিধি বাড়ে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীরা কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন এবং কর ব্যবস্থা নিয়ে মতামত জানিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে কর সুবিধা কম থাকায় তা পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছেন। তারা কর কাঠামোর পুরো প্রক্রিয়াকে অনলাইনে রূপান্তরিত করার দাবি জানিয়েছেন এবং পেমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনাটি ছিল প্রাক-বাজেট বিষয়ক, তবে মূলত আয়কর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংক্রান্ত ইস্যু নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। ব্যাংকিংসহ অন্যান্য খাতের বিষয়ে আলোচনা হয়নি, তবে উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক ছিল। কর আদায় বাড়াতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিল্পখাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এই বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি, তবে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর্থিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো লিখিত আকারে জমা দিতে বলেছেন। বিসিআই সভাপতি জানান, ক্ষুদ্র শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে এসএমই খাতে ভ্যাট কমানো প্রয়োজন এবং তাদের জন্য আট বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া উচিত। এসব প্রস্তাব আমরা উপস্থাপন করেছি।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কর ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। এবার কিছু পরিবর্তন আসবে বলে এনবিআর চেয়ারম্যান আশ্বাস দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নেওয়া হচ্ছে, যা চূড়ান্ত হিসাব নয় এবং পুরোপুরি সমন্বয় বা ফেরত দেওয়া হয় না। এক কোটি টাকা এআইটি নেওয়ার পরও যদি কোনো ব্যবসায়ী ২০ লাখ টাকা কর জমা দেন, তবে আগের কেটে রাখা কর ফেরত দেওয়া হয় না। এটি পরিবর্তন করা প্রয়োজন এবং বিদ্যমান আইন সংশোধন করা উচিত।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, আসন্ন বাজেটে কর ব্যবস্থা ডিজিটাল করা প্রয়োজন। করপোরেট করকে সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। বিগত তিন বছর ধরে অর্থনৈতিক চাপ থাকায় অনেক ভালো ব্যবসায়ী ডিফল্টার হয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta