আতাউল্লাহর ভয়ের গল্প
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), একটি মিয়ানমারভিত্তিক বিদ্রোহী সংগঠন, রোহিঙ্গা জাতির স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে, তার পরিণতি খুবই বেদনাদায়ক। এই সংগঠন, যা একসময় রোহিঙ্গাদের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বর্তমানে তাদের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত আট বছরে, আরসা কর্তৃক খুন হয়েছেন কমপক্ষে ২৯০ জন রোহিঙ্গা নেতা। একইভাবে, বাংলাদেশে থাকা ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে, আরসা তার সদস্যদের দ্বারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, 'আরসা যেভাবে রোহিঙ্গাদের মুক্তির কথা বলে উত্থান ঘটিয়েছিল, পরে তা তাদের জন্য মহাবিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। আতাউল্লাহর গ্রেপ্তার হওয়ার পর, বাংলাদেশের প্রশাসন পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক কিছু জানবে। তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আরসার পুরো নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা সম্ভব হতে পারে।'এছাড়া, একাধিক রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা বলেন, 'আরসা কখনো রোহিঙ্গাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করেনি। তারা রোহিঙ্গাদের ছদ্মবেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে কাজ করেছে। তারা ২৯০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যার মাধ্যমে তাদের দৃষ্টি বা প্রতিবাদকারীকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।'
আরসা, প্রথমে হারাকাহ আল ইয়াকিন নামে আত্মপ্রকাশ করে, যা পরবর্তীতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামে পরিচিত হয়। ২০১২ সালের আরাকানের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং ২০১৩ সালে হরকাতুল ইয়াকিনের উত্থান নিয়ে সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের নায়ক হিসেবে পরিচিত হলেও পরে তারা রোহিঙ্গাদেরই শত্রু হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালের আগস্টে, মিয়ানমারের পুলিশ চেকপোস্টে হামলার পর, এই সংগঠনটি আলোচনায় আসে এবং এতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ব্যাপক আক্রমণ শুরু হয়। পরিণতিতে, বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। তবে, এরপর থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসার গ্রহণযোগ্যতা কমে যেতে থাকে।
এটি আরও জানা গেছে যে, ২০১৭ সালে আরাকান অঞ্চলের আয়েস বিন রশিদসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যার মাধ্যমে আরসা তাদের রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করে। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, আরসা রোহিঙ্গা সমাজের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করে। তার পর থেকে, ২৯০ জন রোহিঙ্গা নেতা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে ক্যাম্পের মাঝি, সাব মাঝি, এবং ক্যাম্পে সক্রিয় সংগঠনের কর্মীরা।
এছাড়া, বাংলাদেশি গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদীসহ অসংখ্য সাধারণ বাংলাদেশিও আরসার হাতে নিহত হয়েছেন। খুনের পাশাপাশি, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র চোরাচালান, চাঁদাবাজি এবং মানব পাচারের অভিযোগও রয়েছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে। মানবাধিকার সংস্থা ফরটিফাই রাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের সহিংসতায় ১৫৫ জন নিহত হয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta