এক-এগারো এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট
এক বছরে আমানত বেড়েছে ২২০ কোটি
কৃষকের আমানত বেড়ে ৭৩০ কোটি টাকা
অতি দরিদ্রদের আমানত বেড়ে ২৪৮ কোটি
বাংলাদেশে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাব এবং আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি বড় আমানতকারীদের, অর্থাৎ কোটিপতিদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণের জন্য ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যা নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট (এনএফএ) হিসেবে পরিচিত।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে, এসব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আমানত পরিমাণ ছিল চার হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল চার হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে, স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক আমানত বেড়েছে ২২০ কোটি টাকা বা ৪.৬৯ শতাংশ। তবে এই হিসাবের মধ্যে স্কুল ব্যাংকিং এবং কর্মজীবী শিশুদের অ্যাকাউন্ট অন্তর্ভুক্ত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে নো ফ্রিল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৮৭৮টি। ডিসেম্বর শেষে, স্বল্প আয়ের মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৮১ লাখ ২৩ হাজার ৩৯০টি, অর্থাৎ তিন মাসে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে দুই লাখ ৫১ হাজার ৫১২টি।
সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং এর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। এর ফলে, স্বল্প আয়ের মানুষেরাও ব্যাংকে টাকা জমা রাখা শুরু করেছে। একই সঙ্গে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব কারণে ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এসব হিসাবের মাধ্যমে আসা মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ছিল ৭৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের রেমিট্যান্সের তুলনায় ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নো ফ্রিলস হিসাবের আওতায় কৃষকদের আমানত ছিল ৬৪০ কোটি, অতি দরিদ্রদের ২৪৩ কোটি, পোশাক শ্রমিকদের ৩৬০ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের ৮৮৪ কোটি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ১ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৫৯৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে, কৃষকদের আমানত বেড়ে ৭৩০ কোটি, অতি দরিদ্রদের ২৪৮ কোটি, পোশাক শ্রমিকদের ৩৬৭ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের ৯১৩ কোটি এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের আমানত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।
২০১০ সালে, প্রান্তিক জনগণের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। এসব অ্যাকাউন্টে কোনো সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কৃষক, পোশাক শ্রমিক, অতিদরিদ্র, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধাভোগীসহ নানা জনগণ ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। কৃষকদের আমানত ও হিসাব সবচেয়ে বেশি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। তখন অনেকেই ব্যাংক থেকে তাদের আমানত তুলে নিয়েছিলেন। তবে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপে, ব্যাংকগুলোর পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক খাতে আবারও আস্থা ফিরে আসে এবং নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমানত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta