তুলসী, ইসলামি শাসনব্যবস্থা ও দেশের ভবিষ্যৎ
মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের এক বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ১৭ মার্চ ভারত সফরে গিয়ে তিনি এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড ঘটছে, যা আমেরিকান সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থি সন্ত্রাস দমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে।’ তুলসী গ্যাবার্ড আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একই মতাদর্শ অনুসরণ করছে।’
তার বক্তব্য প্রকাশের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়, যেখানে তার বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর ও বাংলাদেশের সুনামের জন্য ক্ষতিকর বলা হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও বক্তব্যটি আপত্তিকর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেন। এই মন্তব্য সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়ের মধ্যেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে মনে করছেন, এটি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন টানাপোড়েনের ইঙ্গিত বহন করছে। যদিও অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এই বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না।
প্রথমত, তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য বিশ্লেষণের আগে তার পরিচয় জানা দরকার। তিনি একজন দক্ষ ও সাহসী সেনা কর্মকর্তা, যিনি ইরাক ও কুয়েত যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন এবং পরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে অবসর নেন। রাজনীতিতে প্রবেশের পর প্রথমে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদস্য হলেও পরবর্তীতে রিপাবলিকান দলে যোগ দেন। তুলসীর পরিবার ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি নিজেকে একজন কৃষ্ণভক্ত ও নিরামিষভোজী হিসেবে পরিচিত করেছেন এবং ভারতকে তার আত্মিক মাতৃভূমি মনে করেন।
হিন্দুস্থান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারতে এলেই মনে হয় যেন মাতৃভূমিতে এসেছি।’ নরেন্দ্র মোদি তাকে ভারত সফরে একটি ‘গঙ্গাজল কুম্ভ’ উপহার দেন। তার হিন্দুধর্মের প্রতি বিশ্বাস ও ইসলামি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান আমাদের বুঝতে হবে। ট্রাম্প তাকে এই কারণেই গোয়েন্দাপ্রধান নিযুক্ত করেছেন, যিনি ইসলামি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।
তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যে নতুন কিছু নেই। গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক মহলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তৎপরতা চালিয়েছে, যার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ প্রতিহত করতে মার্কিন সহায়তা অপরিহার্য।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে সংবেদনশীল কূটনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার পরিবর্তে বাংলাদেশে সম্ভাব্য উগ্রবাদ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে এবং বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে বৈশ্বিক ঐক্য গড়তে হবে। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেয়ে বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
ইমেইল: [email protected]
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta