কলকাতার সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টার এখন পরিণত হয়েছে কাপড়ের দোকানে!
কিছুদিন আগে! কলকাতা থেকে বাংলাদেশে যাত্রী পরিবহনকারী 'সেন্টমার্টিন পরিবহন' নিয়মিত বাস চালাচ্ছিল। কলকাতা থেকে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে যাত্রী পরিবহনে এই পরিবহন সংস্থা ছিল একটি বিশ্বাসযোগ্য নাম, অন্য পরিবহন সংস্থাগুলির মতোই।
কিন্তু হঠাৎ পরিস্থিতি বদলে গেল। এক রাতেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় এবং মাসিক ১ লাখ ৪০ হাজার রুপি ভাড়া দেওয়া সেন্টমার্টিন পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তাদের কাউন্টারটি কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে এখন বস্ত্র ব্যবসা শুরু করেছে! এর পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন। ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
এরপরই নিরাপত্তার কারণে ভারত সরকার ভিসা সেবা বন্ধ করে দেয়। প্রথম দিকে কিছু বাংলাদেশি পর্যটক কলকাতায় এলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমে যেতে থাকে। নিউমার্কেট, যা একসময় ছিল ‘মিনি বাংলাদেশ’, এখন প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপর প্রভাব ফেলেছে।
যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার পর পরিবহন ব্যবসা থেকে পোশাকের দোকানের মালিক হয়ে ওঠা মোহাম্মদ সরোজ খান জানান, 'যাত্রী নেই, বাংলাদেশি পর্যটকরা আসছে না। তাই ব্যবসা পরিবর্তন করেছি। প্রতি মাসে ১ লাখ ৪০ হাজার রুপি ভাড়া দিতে হয়। যদি বাস না চলে, তবে পরিবহন ব্যবসা রেখে লাভ কী? এখন টুরিস্ট ভিসা নেই, মেডিকেল ভিসা নিয়েও কম পর্যটক আসছেন। ফলে ব্যবসা বদল ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। পেট তো চালাতে হবে।'
তিনি আরও জানান, 'যখন পরিবহন ব্যবসা ভাল ছিল, তখন দিনে ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি চলত। কিন্তু এখন ৩-৪টি গাড়ি চলে। তাই আমাকে ব্যবসা বদলাতে হয়েছে।'
ব্যবসা বদলানোর পর কি সফলতা এসেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, 'কোনোরকম চলছে। স্থানীয় ক্রেতা রয়েছেন। প্রতিদিন ৭-৮ পিস পোশাক বিক্রি হচ্ছে।'
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, 'বাংলাদেশিরা আসবে, তবে ব্যবসা জমবে। বাংলাদেশি না থাকলে পুরোই ব্যর্থ। নিউমার্কেট, পার্ক স্ট্রিটসহ দুই কিলোমিটার এলাকা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় ক্রেতারা দুই একজন আসছেন, কিনছেন। আর কিছু নয়!'
ব্যবসা পরিবর্তন হলেও দোকানের উপরে এখনো 'সেন্টমার্টিন পরিবহন' নামটি দৃশ্যমান। তবে, যদি পরিস্থিতি বদলায় এবং পূর্বের মতো ব্যবসা ফিরে আসে, তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন সরোজ খান। তার মূল ব্যবসা ছিল পরিবহন, কিন্তু এখন পরিস্থিতির কারণে পোশাক ব্যবসা করতে হচ্ছে। ঈদে যদি কিছু পোশাক বিক্রি হয়, তবেই কোনরকমে চলবে।
তিনি দাবি করেন, 'এই এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। দুই দেশের সরকারের কাছে আমার দাবি, শিগগিরই সমস্যা সমাধান হোক এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত হোক, যাতে ব্যবসা আগের মতো চলতে পারে। স্থানীয় যুবকদের আর্থিক সমৃদ্ধি আসুক।'
সেন্টমার্টিন পরিবহনের দেখানো পথ অনুসরণ করে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। নিউ মার্কেটের কলিন স্ট্রিটে ঢাকা মেজবান রেস্টুরেন্ট, চিটাগং রেস্টুরেন্ট, চট্টগ্রাম মেজবান রেস্টুরেন্ট, সালাহউদ্দিন গেস্ট হাউস, তৈয়ব রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
'ঢাকা মেজবান' রেস্টুরেন্টের সামনে মোহাম্মদ হালিম জানান, 'ঢাকা মেজবান গত পাঁচ মাসে বন্ধ রয়েছে, কারণ বাংলাদেশ থেকে কোনো পর্যটক আসছেন না। সেখানে প্রায় ৮-১০টি হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে। তার নিজের ফলের ব্যবসাও ঠিকঠাক চলছে না, কারণ পর্যটক নেই।'
চিটাগং রেস্টুরেন্টের মালিক আবুজার কামাল জানান, '৫ আগস্টের পর থেকে নিউমার্কেটে প্রায় সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট, রিকশা এবং সিএনজি বন্ধ হয়ে গেছে। আমার হোটেলে ২০ জন কাজ করত, তাদের সবাই চাকরি হারিয়েছে। জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশি পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।'
কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি'র যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার জানান, 'এবার বাংলাদেশি পর্যটকরা আসছেন না, ফলে নিউমার্কেটের ব্যবসা অনেকটাই খারাপ অবস্থায় রয়েছে।' তিনি আরও জানান, 'স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখন ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করার দিকে ঝুঁকছেন।'
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta