বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়া প্রয়োজন
চীনের একটি প্রভাবশালী নেতা সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের উচিত তার নিজস্ব স্বার্থে কাজ করা, কোনো তৃতীয় পক্ষের স্বার্থে নয়। তবে, শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে নিজের ক্ষমতায় থাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের মধ্যে নয়, বরং তা ছিল ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে যে, শেখ হাসিনা নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে মোদির হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত, যা ভারতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সামরিক সরঞ্জাম এবং সেনাবাহিনী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হবে, নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়াবে এবং হাসিনা অবৈধভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে, প্রশ্ন উঠছে, দেশের জনগণের অনুমোদন ছাড়া শেখ হাসিনা কেন ভারতের সঙ্গে এসব গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত সম্পদ শেয়ার করতে সম্মত হলেন।
এছাড়া, ভারত তিস্তা নদী থেকে বাংলাদেশকে ন্যায্য পানি না দেওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। একসময় গঙ্গা নদী (পদ্মা) নিয়ে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। কিন্তু, ত্রিপুরা রাজ্যের পানীয় জল সরবরাহের জন্য মুহুরী নদী থেকে পানি নেয়া এবং আখাউড়ায় রেলযোগাযোগ স্থাপনসহ বহু প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে।
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করে হত্যা করছে, কিন্তু ভারতের সঙ্গে বিবাদ কখনোই সহজে সমাধান হয় না। ভারত বাংলাদেশকে কখনো সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে বিবেচনা করে না, বরং বাংলাদেশের শোষণ অব্যাহত রেখেছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এক উদ্বেগজনক অবস্থানে চলে এসেছে, যা দুই দেশের জনগণের জন্য অগ্রহণযোগ্য ছিল।
শেখ হাসিনার সর্বশেষ চীন সফর ৮-১০ জুলাই ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে তিনি ভারত সফর করেছিলেন। এই দুটি সফরের পর বিশ্বব্যাপী বিশ্লেষকরা বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। চীন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং পদ্মা সেতু সহ একাধিক প্রকল্পে কাজ করেছে। তবে, তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে, তিনি তিস্তা নিয়ে আলোচনা করতে চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চীন পরামর্শ দেয় তিস্তা নদী খনন এবং অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। তবে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
শেখ হাসিনা ও তার সরকার চীনের সহায়তার প্রতি আগ্রহী থাকলেও, ভারতকে জয়ী করতে তিস্তা প্রকল্পটি তারা ভারতের হাতে ছেড়ে দেয়। তবে, চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন দিক নির্ধারণ হচ্ছে।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত করার জন্য বাণিজ্য, সামরিক এবং অন্যান্য খাতে সহযোগিতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চীন বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে এবং সোলার এনার্জি সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্ক তৈরি করতে চায়।
লেখক: বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta