৬০ লক্ষ পুরুষের ওপর জোরপূর্বক বন্ধ্যাত্ব চাপানোর অভিযোগ, ভারতের ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নজির
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ভারতের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক অধ্যায় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তখন "জরুরি অবস্থা" ঘোষণা করেন, যা প্রায় দুই বছর ধরে কার্যকর ছিল। এই সময়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বন্ধ হয়ে যায় এবং নাগরিক অধিকারের ব্যাপক হ্রাস ঘটে। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় ছিল জোরপূর্বক বন্ধ্যাত্ব অভিযান, যেখানে লক্ষ লক্ষ পুরুষের ওপর জোর করে স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (ভ্যাসেক্টমি) চালানো হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে মেওয়াতের উত্তাওয়ার গ্রামের ঘটনা উঠে এসেছে, যা ১৯৭৫ সালের ভয়ঙ্কর দিনের স্মৃতি আজও মানুষের মনে জাগ্রত। হরিয়ানার মুসলিম-প্রধান গ্রামটির বাসিন্দারা সেই রাতের কথা আজও ভুলতে পারেন না, যখন পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হঠাৎ হানা দিয়ে ৪০ জনের অধিক পুরুষকে নিয়ে যান একটি অস্থায়ী স্বাস্থ্য ক্যাম্পে। বৃদ্ধ দিনু খান বলেন,
“আমরা কোনো অপরাধ করিনি, শুধু দরিদ্র ও মুসলমান হওয়ায় আমাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।”
সেখান থেকে তারা অনুমতি ছাড়াই অপারেশনের শিকার হন এবং পরদিন ফিরে আসেন ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে, যাদের জীবন জুড়ে ছিল স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব। অনেকের পরিবার ভেঙে গেছে, কেউ সংসার গড়তে পারেনি।
এই ঘটনাটি ঘটে এমন এক সময়ে, যখন স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক অপারেশন সম্পন্ন করতে বাধ্য ছিলেন। রেশন, চাকরি ও আবাসনের কাগজপত্র পেতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এই বন্ধ্যাত্ব। বিশ্বব্যাংক ও আমেরিকার অর্থনৈতিক সহায়তায় কর্মসূচিটি ব্যাপকভাবে চলছিল।
১৯৭৬ সালে এক বছরে ৬০ লক্ষেরও বেশি পুরুষকে এই পদ্ধতিতে বন্ধ্যাত্ব দেওয়া হয়। নিম্নমানের চিকিৎসা ও তাড়াহুড়োর কারণে প্রায় ২০০০ জনের মৃত্যু হয়।
১৯৭৭ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী প্রচন্ড পরাজিত হন, বিশেষ করে উত্তর ভারতের মুসলিম ও নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে।
৫০ বছর পেরিয়ে আজও উত্তাওয়ার গ্রামে সেই রাতের স্মৃতি তাজা। অনেকেই বলেন,
“তাদের শরীর কেটে নিয়েছিল, স্বপ্নও কেটে নিয়েছিল।”
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta