বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ দরজা
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল। বিশ্বের অনেক দেশের নাগরিক এখানে সহজেই অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে প্রবেশ করতে পারত। বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুবিধা আগে ছিল, যা এখন বন্ধ করে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন দেশ কম্বোডিয়ার পরিস্থিতিও খারাপ। সিয়েম রিপে পর্যটকের সংখ্যা সর্বদা বেশি হলেও, বাংলাদেশিদের জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে দেশটি। কম্বোডিয়ায় ঢুকতে গেলে জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। একইভাবে, ভিয়েতনামও গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশ্ব যেন ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। অনেকে দেশ ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কঠিনতা অনুভব করছেন। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ভিসা পাওয়া কঠিন হচ্ছে, আর ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও নিয়ম কঠোর করা হয়েছে।
ভারতের ভিসা বন্ধ হওয়ার পর, বাংলাদেশিরা ঘুরতে ও চিকিৎসার জন্য যেখানেই যেতেন, বিশেষ করে থাইল্যান্ডেও ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর হয়ে গেছে। আগে যেখানে কয়েক দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া যেত, এখন নিয়মিত আবেদন বাতিল হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সেনজেন অঞ্চলেও ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় বেড়েছে এবং রিজেকশন বাড়ছে। দুবাই কিছু দিন বন্ধ থাকার পর সীমিত ভিসা আবার চালু করেছে, তবে পর্যটকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। সাম্প্রতিক সময়ে উজবেকিস্তান ইলেকট্রনিক ভিসা তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম সরিয়ে দিয়েছে।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বিভিন্ন দেশের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের 'আউটবাউন্ড ট্যুরিজম' বিঘ্নিত হচ্ছে। ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের পাশাপাশি দুবাই, উজবেকিস্তান, ইজিপ্ট, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান ও কাতারের ভিসাও এখন পাওয়া কঠিন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হয়েছে। ভারতের ভিসা বন্ধ থাকার কারণে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার ভ্রমণে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব দেশের সঙ্গে ভিসা সমস্যা সমাধানে যোগাযোগ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন দেশের কঠোর ভিসা নীতির পেছনে অনেকটাই আমাদের দোষ আছে। আমাদের দেশের নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের আচরণে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, বিশেষ করে যারা বিদেশে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে এবং যথাযথ সতর্কতা নিতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, ভাল কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে ভিসা বন্ধ হচ্ছে, যার মধ্যে অপরাধ প্রবণতাও একটি বড় কারণ। ইন্দোনেশিয়া মানব পাচারের কারণ দেখিয়ে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বাতিল করেছে। মানব পাচারের বিষয় নিয়ে দুই দেশের বৈঠক হলেও এখনো সমাধান হয়নি। বর্তমানে ভিসার জন্য আবেদন করলে জটিল যাচাই-বাছাই পেরিয়ে দুই-তিন মাসে ভিসা পাওয়া যায়। ভিয়েতনামে অনেক বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফেরেননি, কেউ কেউ সেখানে কাজ করছেন বা অবৈধভাবে অন্য দেশে চলে গেছেন, যা দেশের কঠোর পদক্ষেপের কারণ।
কাজের সুযোগেও ব্যাঘাত : বাংলাদেশিদের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবে ১৪টি দেশের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা, ওমরাহ, পারিবারিক ভিজিট ও ব্যবসায়িক ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতও কিছুদিন থেকে বন্ধ। ওমানের শ্রমবাজারও গত বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও গত জুন থেকে বন্ধ। ইতালির কাজের ভিসা পেতে কঠিনতা হচ্ছে, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতে পর্যাপ্ত কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। ইউরোপেও প্রত্যাশার তুলনায় ভিসার প্রাপ্তি কম।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta