কিন্ডার গার্ডেনের শিশুদের মাদ্রাসায় উপস্থাপনা
দূর থেকে দেখলে মনে হবে একটি বিশাল টিনের ছাউনির নিচে রয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান, কিন্তু বাস্তবে এর মধ্যে কোনো শ্রেণীকক্ষ বা শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো কিছুই নেই।
তবুও, 'গায়েবি' নামে পরিচিত এই মাদ্রাসাটি সরকারি নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে। এমনকি এটি এমপিওভুক্ত করার চেষ্টাও চলছে, তবে সবাইকে অবহিত না করেই এই কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে।
রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকায় 'নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা' নামে এমন এক মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই মাদ্রাসাটি কাগজে-কলমে বিদ্যমান, কিন্তু বাস্তবে একটি টিনের ছাউনি এবং সাইনবোর্ড ছাড়া এখানে কোনো শিক্ষাদান কার্যক্রম বা শিক্ষার পরিবেশ নেই।
দুদকের অভিযান চলাকালে দেখা যায়, বিশাল মাঠের মধ্যে একটি ছোট টিনের ঘরকে 'নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা' হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তবে সেখানে নিয়মিত শ্রেণী কার্যক্রম বা শিক্ষক নিয়োগের কোনো প্রমাণ নেই।
অথচ এই নামের অধীনে ৫০০ মিটার দূরে অন্য একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা বহুদিন ধরে সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তার সব কাগজপত্র ও অবকাঠামোও রয়েছে।
এই বিষয়ে প্রকৃত 'নতুনপাড়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা'র প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, “৫০০ মিটার দূরে আমাদের নাম ব্যবহার করে একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।”
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আখতার জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ৬ এপ্রিল তারা একটি তদন্ত করেন এবং সেখানে মাদ্রাসাটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, এবং সেখানে কোনো শিক্ষাদান কার্যক্রমও পরিচালিত হয় না।
এছাড়াও, প্রতিষ্ঠান প্রধান শাহিনুর আলম কোনো বৈধ কাগজপত্র, শিক্ষক নিয়োগের প্রমাণ বা শ্রেণী কার্যক্রম সম্পর্কিত কোনো তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।
দুদক ঠাকুরগাঁও সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক আজমির শরিফ মারজী জানান, ‘প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিষ্ঠানের কোনো বাস্তব কাঠামো নেই। তবুও, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা হিসেবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ এবং এমপিওভুক্তির জন্য তদবির চলছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়েছি।’
তিনি আরও জানান, দুদকের উপস্থিতি জানার পর প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরের একটি কিন্ডারগার্টেন থেকে বেশ কিছু শিশুকে এনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়।
চকলেটের লোভ দেখিয়ে তাদের হাজির করা হয়েছিল বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাবো।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta