মেঘনা আলমের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সমির ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে
বাংলাদেশি মডেল মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দারা তার হানি ট্র্যাপের বিষয়টি উন্মোচন করেছেন। তদন্তে জানা যায়, মেঘনা সিন্ডিকেট সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে ফাঁদে ফেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবি করছিল। সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ ধরনের অভিযোগ করেন, এবং মেঘনা আলম ও তার একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাকে হানি ট্র্যাপের শিকার বানানোর চেষ্টা করেছিল। এরপর পুলিশ তার বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে এবং মেঘনা আলমকে গ্রেফতার করে। তাকে একমাসের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মেঘনার এই কর্মকাণ্ডকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন।
সূত্র জানায়, মেঘনা আলমের উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা এবং তা বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো। পাশাপাশি মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ও ছিল তার লক্ষ্য। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি বিদেশি কোনো গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছিলেন। বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের সম্পর্কের অবনতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে এই হানি ট্র্যাপ করা হয়েছিল কিনা, তা এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, মেঘনা আলমের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সমিরকে গ্রেফতারের পর চাঁদাবাজির মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী সাংবাদিকদের জানান, আসামি সমির নারীদের ব্যবহার করে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছিলেন। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবি করার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে গত শুক্রবার ভাটারা থানায় মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের এবং সৌদি আরব বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের প্রধান উৎস। এমনকি সৌদি আরব বিভিন্ন সংকটে বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। তবে সম্প্রতি সৌদি রাষ্ট্রদূত এবং মেঘনা আলমের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। মেঘনা সিন্ডিকেট সৌদি রাষ্ট্রদূতকে হানি ট্র্যাপের ফাঁদে ফেলে পাঁচ মিলিয়ন ডলার চাঁদা দাবি করছিল, এ অভিযোগটি থেকে বেরিয়ে আসে বিস্ময়কর তথ্য।
সূত্র জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী কর্মীদের প্রায় অর্ধেক সৌদি আরবে কাজ করছেন। সৌদি আরব থেকে প্রতি বছর প্রায় চার বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে, এবং বাংলাদেশের কূটনীতিতে সৌদি আরব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ।
সূত্র আরও জানায়, মেঘনা আলমের সম্পর্ক ছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে, এবং গোয়েন্দারা তার কাছে এইসব তথ্য পেয়েছে। মেঘনা আলমের ছবি মোজাম্মেল হক, আব্দুল মোমেন, ওয়বায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। আরও কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে মেঘনার ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে।
জানা গেছে, মেঘনা আলম সেলিব্রিটি শোয়ের কথা বলে কূটনৈতিক পাড়ার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে মিশতেন। এই সম্পর্কগুলোর মাধ্যমে তিনি নারী সরবরাহ এবং দেহব্যবসা পরিচালনা করতেন। তার সিন্ডিকেট আর্থিক সুবিধা, ভিসা, তথ্য পাচার এমনকি আদম পাচারের মত কাজও করত। প্রয়োজন হলে হাইপ্রোফাইল লোকদের ব্ল্যাকমেইল করত মেঘনা আলম।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, মেঘনাকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিপর্যস্ত করা, মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মেঘনা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে পরিচিতি গড়তেন এবং পরে তাদের সঙ্গে নানা প্রস্তাব নিয়ে যোগাযোগ করতেন। আর্থিক সুবিধা, ভিসা এবং বিদেশি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের নামে মেঘনা সিন্ডিকেট বিভিন্ন তরুণীর ভিসা ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করত।
মেঘনা আলমের পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী সমিরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আদালত সূত্র জানায়, সমিরকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সমিরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়েছে, সমির গত জানুয়ারি থেকে সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসেফ আল দুহাইলানের কাছ থেকে টাকা আদায়ে চাপ সৃষ্টি করছিল। বিষয়টি প্রকাশের পর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta