রাগ নিয়ন্ত্রণে নবীজির উপদেশ
মানুষ হচ্ছে সৃষ্টির সবচেয়ে উন্নত জীব। রক্ত, মাংস এবং শিরা-উপশিরায় গঠিত মানবদেহে নানা অনুভূতি থাকে, যেখানে সামান্য কিছুতেই মানুষ খুশি, রেগে যায়, সুখ পায় এবং দুঃখিত হয়।
অতএব বলা যায় যে, রাগ মানুষের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। তবে যখন রাগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা শরীর ও পরকালের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
হাদিসে অনিয়ন্ত্রিত রাগকে শয়তানের প্রভাব বলে চিত্রিত করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, রাগ শয়তানের প্রভাব। শয়তান আগুন থেকে সৃষ্টি হয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৪)
যখন শয়তান মানুষকে প্রভাবিত করে, তখন তার মাধ্যমে এমন কাজ ঘটে যা তার জীবন ও আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এ কারণেই নবী (সা.) তাঁর উম্মতকে বলেছেন, ‘রাগ করো না।’ আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, তুমি রাগ কোরো না। লোকটি কয়েকবার পুনরায় একই কথা বললে, নবী (সা.) প্রত্যেকবারই বললেন, রাগ কোরো না। (বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)
অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে—‘প্রকৃত বীর সেই নয়, যে কুস্তিতে কাউকে পরাজিত করে; বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১৪)
অতিরিক্ত রাগ শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে, যা কখনো জীবন সংকটের কারণও হতে পারে।
২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়, ‘রাগ হূত্স্পন্দনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং রাগের পরবর্তী দুই ঘণ্টায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সাধারণ সময়ের চেয়ে আট গুণ বেশি বাড়িয়ে দেয়।’
গবেষকরা বলেন, রাগের সময় হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়, রক্ত জমাট বাঁধে, রক্তনালি সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিওফ্রে টফলার বলেন, ‘আমাদের বার্তা হলো, মানুষকে সচেতন থাকতে হবে যে তীব্র রাগ বা উদ্বেগ হৃদরোগের কারণ হতে পারে, তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
গবেষণায় বলা হয়েছে, রাগ না করার চেষ্টা করতে হবে। এবং যদি রাগ চলে আসে, তবে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন—দাঁড়িয়ে থাকলে বসে যাওয়া, মুখে পানি দেওয়া এবং রাগের কারণ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করা—এইসব রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য হাদিসের নির্দেশনার মতো।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়িয়ে রেগে যায়, তবে সে যেন বসে পড়ে। যদি রাগ দূর হয়, তা হলে ভালো, না হলে শুয়ে পড়ুক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮২)
এই হাদিসগুলোতে প্রমাণিত হয় যে নবী (সা.) রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমরা সামাজিক জীব হিসেবে নানা পরিস্থিতিতে রেগে যেতে পারি, কিন্তু প্রকৃত মুমিনের গুণ হলো রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্রতিপক্ষকে ক্ষমা করে দেওয়া।
যেমন—মহান আল্লাহ তাআলা সুরা শুরায় খাঁটি মুমিনের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘যারা বড় পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকে এবং রাগ হলে ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৭)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার তাওফিক দান করুন, যাতে আমরা খাঁটি মুমিন হতে পারি। আমিন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta