যেসব শিক্ষা ও আচরণ রেখে গেল মাহে রমজান
মানুষের জীবনে রমজান আসে এবং চলেও যায়। একসময় রমজান ফিরে এলেও হয়তো সেই মানুষটি থাকবে না।
পুরো মাসব্যাপী এক বিশেষ আত্মসংযম ও অনুশীলনের মাধ্যমে রোজাদাররা কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণ রপ্ত করেন। এই শিক্ষাগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে রমজানের তাৎপর্য সার্থক হয়। রমজান যেসব আচরণ আমাদের শেখায়, তা নিচে তুলে ধরা হলো-
তাকওয়া অর্জন :
তাকওয়া অর্থ হলো—আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা। রোজার অন্যতম উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়ার অনুশীলন। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে একজন রোজাদার তাকওয়ার চর্চা করে। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় সব কিছু ত্যাগই তাকওয়ার প্রকৃত উদাহরণ।
আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তী জাতিদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩)।
অন্যের প্রতি সহানুভূতি :
রমজান সহানুভূতির মাস হিসেবে বিবেচিত। গরিব ও অসহায় মানুষদের কষ্ট বুঝতে রোজার সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণার অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। এই উপলব্ধি দান ও সহমর্মিতার চর্চাকে আরও উৎসাহিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানে অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দান করতেন।
জিবরাইল (আ.) প্রতিরাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং রাসুল (সা.) তাঁর সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তিনি বাতাসের মতো দানশীল ছিলেন। (বুখারি, হাদিস : ৬; মুসলিম, হাদিস : ৬১৪৯)। এই শিক্ষা সারা বছর বজায় রাখা উচিত।
ধৈর্য ধারণ :
রমজান ধৈর্যের মাস হিসেবেও পরিচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এটি ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা, বায়হাকি, হাদিস : ৩৬০৮)
রোজার সময় সুস্বাদু খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও তা গ্রহণ না করা, বৈধ সম্পর্ক থেকেও বিরত থাকা ধৈর্যের অনন্য উদাহরণ। এই ধৈর্য যেন রমজানের পরেও জীবনে বজায় থাকে।
সুন্দর আচরণ :
রোজা মানুষকে সংযমী করে এবং শিষ্টাচার শেখায়। রোজা রাখার সময় গিবত, অশ্লীলতা, ঝগড়া থেকে বিরত থাকা বাধ্যতামূলক।
হাদিসে এসেছে, ‘রোজা অবস্থায় কেউ যেন অশ্লীল বা কটূ কথা না বলে এবং ঝগড়ায় না জড়ায়। কেউ অপমান করলে বলে দেবে—আমি রোজাদার।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮০৫; মুসলিম, হা: ২৭৬২)।
সততা ও প্রতারণাহীনতা :
রোজা মিথ্যা এবং প্রতারণামুক্ত জীবন গঠনের আহ্বান জানায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও মিথ্যা বলা ও অসততা ছাড়ে না, আল্লাহর কাছে তার পানাহার ত্যাগের কোনো মূল্য নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)।
কোরআনভিত্তিক জীবন :
রমজান মাসেই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে বলে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। রমজানে কোরআন পাঠের প্রতি মুসলমানদের মনোযোগ বেড়ে যায়। রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন রোজাদার ও পাঠকের পক্ষে সুপারিশ করবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৬২৬)।
অতএব, রমজানে যে আচরণগুলো রপ্ত হয়, সেগুলো পুরো বছর ধরে অনুসরণ করলে একজন মুমিন নিজের ইহকাল ও পরকালের সাফল্য অর্জন করতে পারেন। রমজানের সংস্পর্শ জীবনে এক মূল্যবান সংযোজন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta