গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধে কুকুরের পরিবর্তে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল (হিউম্যান শিল্ড) হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েলি সেনারা।
এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) নন-রিজার্ভিস্ট ব্রিগেডের এক সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা। তিনি জানান, দিনে অন্তত ছয়বার বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
স্থানীয় সময় রবিবার ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নাম গোপন রেখে এসব জানান ওই সেনা কর্মকর্তা, যিনি নয় মাস ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তি একজন নন-রিজার্ভিস্ট সেনা। নন-রিজার্ভিস্ট ব্রিগেডে তারা অন্তর্ভুক্ত, যারা রিজার্ভ ফোর্সের অংশ নয়, এবং নিয়মিত পূর্ণকালীন সেনা সদস্য।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা নিয়মিতভাবেই ফিলিস্তিনিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করত, যা তাদের রণনীতি হিসেবে কাজ করত। যেকোনো সামরিক অভিযানের আগে গাজার বাড়িতে জোর করে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ঢুকিয়ে নিশ্চিত করা হতো যে সেখানে কোন বিপজ্জনক বস্তু বা হামাসের যোদ্ধা রয়েছে কি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, ফিলিস্তিনিদের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের পদ্ধতিকে আইডিএফ সেনারা ‘মসকিউটো প্রোটোকল’ (মশা প্রোটোকল) নামে কোড করে ডেকেছিল।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার দু’মাস পর তিনি প্রথম এই অমানবিক রণনীতির মুখোমুখি হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, সাধারণত এই কাজে সেনারা কুকুর ব্যবহার করে থাকে, তবে সে সময় কুকুরের অভাব থাকায় ফিলিস্তিনিদের ব্যবহার করা হতো। সেনারা এসব নাগরিকদের ‘শাবিশ’ বলে অভিহিত করত।
প্রতিটি প্লাটুনে একজন করে, অর্থাৎ প্রতিটি ব্রিগেডে ৩৬ জন শাবিশ রাখা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, যুদ্ধে মানবঢাল ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এটি আন্তর্জাতিক আদালতের রোম সংবিধির অধীনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
গত মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ছয়টি তদন্ত শুরু করলেও, সেনা কর্মকর্তা মনে করেন প্রকৃতপক্ষে এক হাজার তদন্ত প্রয়োজন ছিল।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনীতে এই পদ্ধতি এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, তাকে মনে হয়েছিল তিনি হ্যালুসিনেট করছেন। তিনি জানতেন না কোন পরিস্থিতি বেশি খারাপ—সেনাবাহিনী জানত না যে অভিযানে কী হচ্ছে, নাকি তারা জানলেও কিছু করেনি।
এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও মানবঢাল ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পরও এটি বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নেননি, বরং এটিকে অভিযানের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, গাজার বাড়িতে মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করে রোবট কিংবা কুকুর ব্যবহার করা যেতে পারে।
এই অমানবিকতার বিরুদ্ধে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিনা কারণে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলার তিনি পক্ষপাতি নন। সূত্র: মিডল ইস্ট আই, সিবিএস নিউজ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta