এবারের শোলাকিয়া ঈদের জামাত অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের জন্য। এবার ঈদুল ফিতরের ১৯৮তম জামাত সকাল ১০টায় শুরু হবে। জামাতের ইমামতি করবেন কিশোরগঞ্জ শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ এবং বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন মাওলানা জুবায়ের ইবনে আব্দুল হাই।
ফ্যাসিবাদী জামানায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত স্থায়ী ইমামকে বাদ দিয়ে ইমাম হিসেবে নিয়োগ হয়েছিল মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে। বিতর্কিত এই ইমাম নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ ছিল এবং তার প্রভাব ঈদ জামাতে পড়ত। গত বছরের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে বাদ দিয়ে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত স্থায়ী ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ সাইফুল্লাহকে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এই পুনর্বহালের পর স্থানীয় মুসল্লিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া দেখা গেছে। এবার ঈদ জামাতে মুসল্লির সংখ্যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি হতে পারে। মাঠ পরিচালনা কমিটি ঈদ জামাতের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে, যেমন মোবাইল ফোন নিয়ে মাঠে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা না থাকা, তবে ছাতা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এবারের ঈদ জামাতের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের লাইন টানা, চুনকাম এবং আজুখানা মেরামতসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রশাসনও মাঠ পরিদর্শন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
এবারও বাংলাদেশ রেলওয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালাচ্ছে। বিশেষ ট্রেন দুটি ভৈরব বাজার-ময়মনসিংহ ও ময়মনসিংহ-ভৈরব বাজার রুটে চলবে। একটির যাত্রা শুরু হবে ঈদের দিন সকাল ৬টায় এবং অন্যটি সকালে পৌনে ৬টায় ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এবার অতিরিক্ত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। মাঠের চারপাশে দুই কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনী কাজ করবে। ঈদগাহ মাঠে তিনটি প্রবেশপথে আর্চওয়ে এবং মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অটুট রাখতে আরও বেশিসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, “২০১৬ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলার পর থেকে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তার জন্য বিল্ডিংয়ের ছাদেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।”
এদিকে, পুলিশ এবং র্যাব সদস্যরা মাঠের ভেতর এবং বাইরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। র্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন এবং নাশকতাকারী, ছিনতাইকারী, পকেটমার এবং চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
শোলাকিয়া ঈদগাহের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, এবারের জামাতের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে এবং লাখ লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভি এই ঈদ জামাত সরাসরি সম্প্রচার শুরু করেছিল। বর্তমানে চ্যানেল আই সহ অন্যান্য মিডিয়া এই ঈদ জামাতের নিউজ কাভার করে থাকে।
প্রতি বছর ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহে মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন হয়। এবারও এই ঈদ জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা শোলাকিয়া আসবেন।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদ জামাত চলাকালে শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। সেই পর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন, যা এখন ‘শোলাকিয়া’ নামে পরিচিত।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta