শৈশবের স্মৃতি আমাদের মনে থাকে না, গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
শৈশবের স্মৃতি আমাদের মস্তিষ্কে থাকে না। অনেক চেষ্টা করলেও আমরা সেই সময়ের কিছু মনে করতে পারি না। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? কেন আমরা শৈশবের স্মৃতি মনে রাখতে পারি না?
প্রথমিক জীবনের প্রথম বছরগুলোতে মানুষ অনেক কিছু শিখলেও বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সেই সময়ের কোনো নির্দিষ্ট স্মৃতি মনে করতে পারেন না। বিজ্ঞান এই ঘটনাটিকে ‘ইনফ্যান্টাইল অ্যামনেশিয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, শিশুদের শৈশবের স্মৃতি মনে না রাখতে পারার কারণ হল হিপ্পোক্যাম্পাস, যেটি মস্তিষ্কের একটি অংশ যা স্মৃতি সংরক্ষণ করে। শিশুকালে এটি পুরোপুরি বিকশিত হতে পারে না।
তবে এখন ‘ইয়েল ইউনিভার্সিটির’ একটি নতুন গবেষণায় জানা গেছে, শিশুরা অনেক আগে থেকেই স্মৃতি তৈরি করতে পারে, যা বিজ্ঞানীদের পূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক আগের ব্যাপার।
গবেষণায় চার মাস থেকে দুই বছর বয়সী শিশুদের বিভিন্ন ছবি দেখানো হয়। পরে তাদের পুরানো এবং নতুন ছবির মিশ্রণ দেখানো হয়। যদি শিশুরা পুরানো ছবির দিকে বেশি সময় তাকিয়ে থাকে, তবে এটি তাদের স্মৃতির চিহ্ন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এছাড়া, শিশুদের মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের কার্যক্রম পরিমাপ করতে গবেষকরা এফএমআরআই স্ক্যান ব্যবহার করেছেন।
গবেষকরা জানান, যখন শিশুরা নতুন ছবি দেখার সময় হিপ্পোক্যাম্পাস আরও সক্রিয় হয়, তখন তাদের স্মৃতি ধারণ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, ছোট শিশুরাও তাদের হিপ্পোক্যাম্পাস ব্যবহার করে এপিসোডিক স্মৃতি তৈরি করতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই কাজ করে।
গবেষকরা বলেছেন, মস্তিষ্কের পশ্চাদভাগে হিপ্পোক্যাম্পাসের কার্যকলাপ হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী স্মৃতির তৈরি। প্রাপ্তবয়স্করা এই অংশ ব্যবহার করে স্মৃতি সংরক্ষণ করেন। এমন প্রভাব ১২ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের মধ্যেও দেখা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, তিন মাস বয়সী শিশুরা তাদের মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসের অন্য অংশ ব্যবহার করে পরিসংখ্যানগত শিক্ষা, যা তাদের বিভিন্ন বস্তু শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
এই অংশটি শিশুদের শেখাতে সহায়তা করে কীভাবে রেস্তোরাঁ সাধারণত দেখতে হয় অথবা খাবারের সময় কী ঘটতে পারে, যা ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গি শেখাতে সাহায্য করে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, শিশুদের স্মৃতি তৈরি করা সম্ভব হলে, প্রাপ্তবয়স্করা কেন শৈশবের স্মৃতি মনে রাখতে পারে না?
এ নিয়ে কয়েকটি ধারণা রয়েছে। একটি ধারণা হচ্ছে, স্মৃতিগুলি স্থায়ী হয় না এবং ম্লান হয়ে যায়। অন্যটি হল, এই স্মৃতিগুলি এখনও মস্তিষ্কের গভীরে লুকিয়ে আছে, কিন্তু আমরা সেগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারি না।
গবেষকরা মনে করছেন, দ্বিতীয় ধারণাটি সত্যি হতে পারে। তারা বলছেন, প্রাথমিক জীবনের স্মৃতিগুলি মস্তিষ্কের কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে, যা বড় বয়সেও মানুষের মনে আসতে পারে। সেই লুকানো স্মৃতিগুলি উন্মোচন করার চেষ্টা করছেন তারা।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta