বর্তমানে ১৫% স্ট্যান্ডার্ড মূসক (ভ্যাট) হার থাকার পরও বিভিন্ন খাতে তা ১০%, ৭.৫% এবং ৫% হারে নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া উপকরণ কর রেয়াতের সুবিধা সবক্ষেত্রে নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত করের চাপ বহন করছেন। এই পরিস্থিতিতে, আগামী বাজেটে ভ্যাটের হার সিঙ্গেল ডিজিট নির্ধারণের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য ভ্যাট ১% হারে নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে ঢাকা চেম্বার। এর মাধ্যমে সামগ্রিক কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আসবে, ব্যবসার পরিচালন খরচ কমবে এবং উৎপাদন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করে বাণিজ্য সংগঠনটি।

মঙ্গলবার এনবিআরের সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ঢাকা চেম্বারের ৪২টি প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এফসিএমএ-এর কাছে উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই’র সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

ডিসিসিআই’র প্রস্তাবনায় করজাল সম্প্রসারণ, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ, করহার কমানো, ব্যবসাবান্ধব করনীতি এবং অটোমেশন ব্যবস্থা চালু, মূসক ব্যবস্থার সংস্কার, স্থানীয় শিল্প ও উৎপাদন খাতের সুরক্ষা, আমদানি শুল্ক ও ট্যারিফ ব্যবস্থা সহজীকরণ এবং ব্যক্তি শ্রেণির কর কাঠামোর সংস্কার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এনবিআরকে অভিনন্দন জানান যে তারা সকল করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রক্রিয়ার আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, এনবিআরের তথ্যমতে দেশে টিনধারীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ হলেও ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত মাত্র ৩৭ লাখের বেশি রিটার্ন দাখিল হয়েছে, যার মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯টি। তিনি এনবিআরকে করদাতা বৃদ্ধি এবং করজাল সম্প্রসারণের জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।

এছাড়া, তাসকীন আহমেদ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অটোমেটেড কর রিটার্ন পদ্ধতি চালু করার ওপর গুরুত্ব দেন। বিদ্যমান ঊর্ধ্বগতির মূল্যস্ফীতির কারণে তিনি ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লক্ষ টাকা করার আহ্বান জানান। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য পণ্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম কর ৫% থেকে ধাপে ধাপে কমানোর এবং উৎপাদনকারীদের জন্য অগ্রিম কর ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব করেন তিনি।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আরো বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ট্যারিফ ভ্যালু এবং বাজার মূল্যের মধ্যে পার্থক্য থাকায় ব্যবসায়ীরা বেশি শুল্ক পরিশোধ করছেন, যা ব্যবসার ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং আমদানি প্রক্রিয়াকে জটিল ও ব্যয়বহুল করে তুলছে। তিনি ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে নির্দিষ্ট হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এফসিএমএ বলেন, বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট রাজস্ব নীতিমালার ক্রমাগত সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্প্রসারণে এনবিআর দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, গত ১০ বছরে টিনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়ালেও করদাতার সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়েনি, যা হতাশাজনক।

তিনি আরও বলেন, আয়কর এবং কর্পোরেট ট্যাক্সের অনলাইন দাখিল প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম পরিচালনা করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের লক্ষ্যে কর্পোরেট করের হার কমানো প্রয়োজন বলে এনবিআর চেয়ারম্যান মতামত দেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ী সমাজ একমত হলে, সরকার ভ্যাটের বিভিন্ন স্তর না রেখে ভ্যাট হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসতে আগ্রহী। তবে এতে ব্যবসায়ীদের স্বদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা প্রয়োজন। এনবিআর প্রয়োজনে দেশীয় তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে আগ্রহী, এবং তিনি ব্যবসায়ী মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি আরও জানান, আগামী অর্থবছরে কর রেয়াত ব্যবস্থা আরো উদার করতে এনবিআর আগ্রহী।

এ সময় ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান সহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত