যমুনা রেলসেতু চালু হলো
যমুনা রেলসেতুতে চলাচলকারী ট্রেনে ভাড়া বাড়বে : সচিব
স্বপ্নের যমুনা রেলসেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে চালু হয়েছে। ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন যাতায়াত শুরু হয়েছে নতুন সেতুর উপর। ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডে পার হওয়ার সাথে সাথে সাধারণ মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ২৪ মিনিটে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে স্পেশাল ট্রেনটি পৌঁছায়। এর আগে, ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর ইব্রাহিমবাদ স্টেশন থেকে ট্রেনটি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে, যা সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উদ্বোধনের পর দেশের রাজধানীসহ উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী ট্রেনটি ১২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার করেছে মাত্র ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডে।
সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছানোর পর বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, জাইকার সাউথ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তারুকী, যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান এবং বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
যমুনা রেলসেতু প্রকল্পটির ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭.৬০ শতাংশ দেশীয় এবং ৭২.৪০ শতাংশ জাইকা ঋণ দিয়েছে। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা করা হয়।
১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতুর চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দিলে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হয়। এই সমস্যা সমাধানে নতুন রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম জানান, এই ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাক সেতুর প্রতিটি স্প্যানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। এর ফলে ট্রেন ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে।
যমুনা রেল সেতুতে চলাচলকারী ট্রেনে ভাড়া বাড়বে : সচিব
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু রেললাইনের জন্য নির্মিত না হলেও একটি রেলসেতু অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে আরেকটি রেল সেতুর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলে, জাইকার সহায়তায় নতুন রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এবং এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে যমুনা সেতুর রেললাইন দিয়ে ভারী পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারত না, কিন্তু নতুন রেল সেতুতে সেটি সম্ভব হবে। এছাড়া, নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।
সচিব আরও বলেন, যমুনা রেল সেতুতে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
রেল সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
সংবাদ সম্মেলন ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি, যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান প্রমুখ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta