শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়ার প্রয়াণে দেশ শোকাহত
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের গোরখোদক মো. মনু মিয়া শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় নিজ ঘরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিন হাজার ৫৭ জনের কবর খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তিনি। তার প্রয়াণে নেটিজেনরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। ফেসবুকে বহু মানুষ তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
অভিনেতা খাইরুল বাসার লিখেছেন, ‘মনু কাকা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘ দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন, তিন দিন আগে বাড়ি ফিরেছেন।
তিনি বলছিলেন আগের থেকে অনেক ভালো আছেন। আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা পূরণ করে বাড়ি ফিরিয়েছেন। সুস্থ অবস্থায় তিনি আল্লাহর ডাক মেনেছেন এবং তার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন। হয়তো নিজের জন্মস্থান থেকে আল্লাহ তাঁকে ডেকে নিয়েছেন।’
বাসার আরও লিখেছেন, ‘তাঁর মহৎ কাজের প্রতিদানে আল্লাহ তাঁকে সওয়াব দেবেন। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন। সবাই মনু কাকার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ তাকে শান্তিতে রাখুন। আমিন।’
মনু মিয়া যখন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন, তখন বাসার তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ঘোড়া কিনে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েও রাজি করাতে পারেননি তিনি।
আশরাফুল ইসলাম লিখেছেন, অবশেষে চলে গেলেন শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়া। আজ সকালে ইটনার আলগাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এমন একজন মহান মানুষ আর এই জীবন পাবে না।
তাফসিলুল আজিজ লিখেছেন, ইন্না লিল্লাহ... পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে শুধু পরোপকারের জন্য। মনু মিয়া তাদের একজন ছিলেন। আজ তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এক নিঃস্বার্থ মানুষের বিদায়। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তিন হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছিলেন।
তার কবর খুঁড়ার কাজের প্রস্তুতি চলছে। মনু মিয়া কষ্টের যাত্রায় সর্বদা হাতে খুন্তি ও কোদাল নিয়ে ঝড়-ঝাপটা উপেক্ষা করে দ্রুত পৌঁছাতেন। মানুষের অন্তিম যাত্রায় তার আন্তরিক সহায়তা ছিল অনন্য। কোনো পারিশ্রমিক নিতেন না। দ্রুত পৌঁছানোর জন্য নিজের ধানিজমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন তিনি, যা তাকে সচল রাখত। সম্প্রতি অসুস্থতার কারণে ঘোড়াটি দুর্বৃত্তরা মেরে ফেলেছিল।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনা প্রচারিত হলে দেশ-বিদেশ থেকে অনেকেই সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন, তবে মনু মিয়া তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। শুধু সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছিলেন, যেন আবার অন্যের কবর খুঁড়তে পারেন। তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। নিঃস্বার্থ সেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থেকে গেলেন তিনি। আজ শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে তার দেহাবসান হয়েছে। পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী সবাইকে একদিন যেতে হয়, কিন্তু মনু মিয়ার মতো মানুষ চিরদিন স্মরণীয় থাকবে।
রেজা শাহীন লিখেছেন, ‘মনু মিয়া আর ঘোড়া নিয়ে কবর খুঁড়তে যাবেন না। নিজের কবর খুঁড়তে অন্যরা এসেছেন। ঘোড়া নেই, মনু মিয়াও নেই। আল্লাহ যেন তাদের একসাথে জান্নাতে বসবাস দান করেন।’
মোকসেদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘মনু মিয়ার মৃত্যু সমাজের কিছু পরিবর্তন আনে না, তবে তিনি দেখিয়েছেন মানুষ কেমন হতে পারে। ৫০ বছর বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছেন। নিজের জমি বিক্রি করে ঘোড়া কিনে দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। ঘোড়াটির অনুপস্থিতিতে দুর্বৃত্তরা তা নষ্ট করেছিল। বিশ্ব থেকে সহযোগিতা চাওয়া সত্ত্বেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আজ তাঁর কবর খোঁড়ার প্রস্তুতি চলছে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।’
জোনায়েত হোসেন লিখেছেন, ‘৩ হাজারেরও বেশি কবর খোঁড়া মনু মিয়া আজ আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
পারভেজ আলম লিখেছেন, ‘মানুষের যন্ত্রণা অন্য কেউ বুঝবে না, নিজের স্বার্থ ছাড়া। ৩ হাজার কবর খোঁড়া মনু মিয়া আজ আল্লাহর ডাকে চলে গেছেন। দোয়া করি আল্লাহ তাকে শান্তি ও জান্নাত দান করুন। যারা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, আল্লাহ তাদের নরও করুক।’
ইস্রাফিল হোসেন লিখেছেন, ‘৬৭ বছর বয়সী শেষ ঠিকানার কারিগর মনু মিয়া আর নেই। প্রায় ৫০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছিলেন।’
এমরানুল হক লিখেছেন, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মনু মিয়া একজন সৎ মানুষ, মানুষের শেষ যাত্রার সঙ্গী। ৩ হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছিলেন। জমি বিক্রি করে ঘোড়া কিনেছিলেন দ্রুত পৌঁছানোর জন্য। মৃত্যুর আগে তার ঘোড়াটিকে কেউ হত্যা করেছে। তিনি চলে গেলেন রবের কাছে। মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাত দান করুন।’
অনেকেই তাদের ফেসবুক ও পেইজে মনু মিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta