ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখে খেলাফত মজলিস নির্বাচনে অংশ নেবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দলগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হবে। ৩০০টি আসনে প্রার্থী দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
রবিবার দুপুর ১২:৩০ মিনিটে রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক এই ঘোষণা দেন।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। গত ১৫ বছরে যারা সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে খেলাফত মজলিসের নেতারা অন্যতম। অনেক নেতাই দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের সংগঠন ও নেতাদের সরাসরি নিশানা করেছিল।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাজপথে গড়ে ওঠা ঐতিহাসিক ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। বর্তমান রাজনৈতিক সমন্বয় যেন অটুট থাকে, যেখানে কেউ কাউকে উৎখাত বা দমন করছে না। যদি কেউ আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের পথে ফিরে গিয়ে দমন-উৎখাতের রাজনীতি শুরু করে, তাহলে খেলাফত মজলিস জাতীয় ঐক্যের ডাক দিবে এবং সক্রিয় ভূমিকা নিবে। দেশের নেতৃত্ব দেশের মানুষের সিদ্ধান্তে পরিচালিত হবে এবং কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্র যেন বাস্তবায়িত না হয়, সে বিষয়েও আমরা দায়িত্ব পালন করব।
নির্বাচন বিষয়ে মাওলানা বলেন, খেলাফত মজলিস ইসলাম ও দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনী পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে ৩০০ আসনে রিকশা প্রতীকে নির্বাচন করবে। পাশাপাশি বৃহত্তর জোট বা নির্বাচনী সমঝোতার মাধ্যমে যদি ইসলাম ও দেশের স্বার্থ আরও ভালোভাবে রক্ষা হয়, তাহলে সে পথে আগাতে দল প্রস্তুত।
সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের কাঠামোর অমীমাংসিত বিষয়গুলো দ্রুত পরিষ্কার করুক। সংসদের দ্বি-কক্ষীয় কাঠামো নিয়ে ঐকমত্য থাকলেও উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ গঠনের পদ্ধতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পিআর সিস্টেম নিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা আংশিক পিআর সিস্টেমের পক্ষপাতী। বর্তমান ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয় না। তাই ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আংশিক পিআর সিস্টেম নিম্নকক্ষে এবং পূর্ণ পিআর সিস্টেম উচ্চকক্ষে চালু করা দরকার। খেলাফত মজলিস বিশ্বাস করে দেশের স্বার্থে শক্তিশালী ও গঠনমূলক বিরোধী দল থাকা অপরিহার্য এবং বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার রাজনীতি দেশের মাটিতে চলবে না, ইনশাআল্লাহ।
এক প্রশ্নের জবাবে মাওলানা বলেন, খেলাফত মজলিস ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামী ঐক্যকামী দল এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বৃহত্তর ইসলামী জোট গঠনে কাজ করে আসছে।
স্থানীয় নির্বাচনও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনের পূর্বে সকাল ১০টা থেকে একই স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচিতি ও ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিন শতাধিক রিকশা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের নির্বাচন, রাজনীতি ও দলের আদর্শ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের অভিভাবক পরিষদের সদস্য মাওলানা আকরাম আলী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মাওলানা আলী উসমান, মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি শরাফত হোসাইন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী ও মাওলানা শরিফ সাইদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta