তালগাছ কেটে পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যার ঘটনা
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকায় একটি তালগাছ কেটে পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা ও ডিম নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি শেখেরহাট ইউনিয়নের গুয়াটন গ্রামে সরকারি সড়কের পাশে থাকা একটি বড় তালগাছ কেটে ফেলেন। এই গাছটি ছিল আশপাশের বাবুই পাখিদের বাসস্থান ও প্রজননের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
শনিবার (২৮ জুন) সরেজমিনে জানা যায়, মোবারেক আলী ফকির নামের এক ব্যক্তি গাছটি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেছিলেন। এরপর গাছটি কেটে ফেলা হয়, যার ফলে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাবুই পাখির ছানা ও ডিম ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, গাছটি শুধু গাছ ছিল না, এটি একটি জীববৈচিত্র্যের কেন্দ্র ছিল। বহু বছর ধরে বাবুই পাখিরা এই গাছে বাসা বেঁধে আসছিল। কেউ কেউ একে ‘প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য’ বলেও অভিহিত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, “যারা এই কাজ করেছে, তারা শুধু গাছ কাটেনি, বরং প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।”
এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। তবে ঝালকাঠি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন জানান, বিষয়টি জানার পর বন বিভাগকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাটি জানার পর দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা। তিনি বলেন, “বিশ্বে ১১৭ প্রজাতির বাবুই পাখি রয়েছে, তবে বাংলাদেশে মাত্র তিন প্রজাতি আছে। দেশি বাবুই এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।”
তিনি আরও জানান, দেশি বাবুই তাল, নারকেল ও খেজুর গাছে ঝুলন্ত বাসা তৈরি করে। বরিশাল অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। অনেকেই ভুল করে ভাবেন বাবুই ফসলের ক্ষতি করে, অথচ তারা মূলত ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের ১ নম্বর তফসিল অনুযায়ী বাবুই একটি সংরক্ষিত পাখি। এটি শিকার, হত্যা বা ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টি ধ্বংস হওয়ায় সচেতন মহল তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta