পৃথিবীর জীবনের উৎস কি মহাকাশ থেকে?

প্রায় কয়েক শ’ কোটি বছর আগে, সৌরজগতের প্রথম পর্যায়ে একটি জলবায়ুসমৃদ্ধ, লবণাক্ত গ্রহ আমাদের সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছিল। হঠাৎ তার সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে অন্য একটি বস্তুর। এই সংঘর্ষের ফলে ওই গ্রহটি ভেঙে পড়ে, আর তার একটি অংশ আজকে পরিচিত গ্রহাণু ‘বেন্নু’ হিসেবে আমাদের সামনে এসেছে।

সম্প্রতি, মার্কিন মহাকাশযান OSIRIS-REx এই বেন্নু গ্রহাণু থেকে ধূলিকণা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনেছে। এই নমুনায় এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে, যা প্রাণের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের জ্যোতির্বিদ সারা রাসেল বলেন, ‘এই নমুনা দেখে আমরা অবাক। এতে এমন সব যৌগ পাওয়া গেছে, যা আগে কখনো কোনো গ্রহাণু বা মহাজাগতিক বস্তুতে দেখা যায়নি।’ এই বিস্ময়কর আবিষ্কার নিয়ে আগামী ১৬ মে মিউজিয়ামে ‘Space: Could Life Exist Beyond Earth?’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনী শুরু হবে। সেখানে দর্শকরা চাঁদ, মঙ্গল ও গ্রহাণু থেকে আসা কিছু বাস্তব নমুনা স্পর্শ করতে পারবেন।

বিজ্ঞানীরা জানান, বেন্নুর অভিভাবক গ্রহে ছিল লবণাক্ত ভূগর্ভস্থ জলাধার। সেই জল শুকিয়ে যাওয়ার পর সেখানে থাকা লবণটি পৃথিবীর শুষ্ক হ্রদের লবণের মতো হয়ে পড়ে। এই লবণের সঙ্গে মিলেছে ফসফেট, অ্যামোনিয়া ও ১২ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যেগুলো পৃথিবীতে প্রাণীদের শরীরে পাওয়া যায়। এমনকি, RNA ও DNA গঠনে ব্যবহৃত পাঁচটি মৌলিক নিউক্লিওবেসও সেখান থেকে পাওয়া গেছে।

এই উপাদানগুলি প্রমাণ করে, বেন্নুর মতো গ্রহাণুরাই হয়তো এক সময় পৃথিবীতে আঘাত হেনে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে এসেছিল। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন না যে বেন্নুতে কখনো প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল, বরং এই উপাদানগুলো পৃথিবীর অনুকূল পরিবেশে এসে প্রাণের সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।

এই আবিষ্কার আমাদের শিক্ষা দেয়, যে প্রাণ শুধু পৃথিবীতেই নয়, মহাকাশের আরও অনেক গ্রহ ও উপগ্রহে থাকতে পারে। বৃহস্পতির ইউরোপা, গ্যানিমিড, টাইটান, এনসেলাডাসের মতো উপগ্রহগুলোর বরফঢাকা পৃষ্ঠের নিচে বিশাল জলাধার রয়েছে, যেখানে অনুসন্ধান চলছে।

এছাড়াও, ব্রিটেনের তৈরি রোসালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন রোভার ২০২৯ সালে মঙ্গলে অবতরণ করে গভীর খনন করে প্রাণের কোনো প্রমাণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।

সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, বেন্নুর ধূলিকণায় একটি বিশেষ ধরনের ফসফরাস যৌগ পাওয়া গেছে, যা আগে কখনো কোনো উল্কাপিণ্ডে দেখা যায়নি, অথচ এটি জীবনের বিকাশে অত্যাবশ্যক।

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে—এই ধারণা এখন বিজ্ঞানীদের কাছে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। একদিন হয়তো আমরা সত্যিই প্রমাণ পাব, যে এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল