বিভিন্ন মত ও ধর্ম থাকলেও আমরা একই পরিবারের অংশ : প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ দেশের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ পাহাড় ও সমতলের নানান জাতিগোষ্ঠী মিলে একটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তৈরি করেছে। মত ও ধর্মের ভিন্নতা থাকলেও আমরা সবাই একই পরিবারের অংশ। সুখ-দুঃখে পাশে থাকাই আমাদের ঐক্যের প্রতীক। পয়লা বৈশাখ এই সম্প্রীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। গতকাল সকালে বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে‘সম্প্রীতি ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সবাই যেন নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিতে নববর্ষ উদযাপন করেন এবং এই সার্বজনীন আনন্দে অংশগ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় স্বার্থে ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কল্যাণে অবদান রেখে চলেছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রাচীনকালে বৌদ্ধবিহারগুলো ছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভিক্ষু ও শিক্ষার্থীরা এখানে এসে জ্ঞান অর্জন করতেন। বুদ্ধের শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী এখান থেকেই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু ধর্মীয় চর্চা নয়, জনকল্যাণমুখী নানা কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এসব বিহারে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে আমরা আজ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে ‘সম্প্রীতি ভবন’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছি। এই ভবন আমাদের জাতীয় ঐক্য, সম্প্রীতি এবং মানবতার বার্তা বহন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিশেষ অবদান রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, গৌতম বুদ্ধ তার অহিংসা ও সমতার দর্শনের মাধ্যমে মানবতার কল্যাণের কথা বলেছেন। বৌদ্ধ ধর্ম সব জীবের মঙ্গল কামনায় কাজ করে। এমনকি ক্ষুদ্র প্রাণীকেও শান্তি থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। তিনি বলেন, অতীশ দীপঙ্কর ছিলেন একজন বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত, যিনি চীনের তিব্বতে গিয়ে বুদ্ধের বাণী প্রচার করেন। তার প্রতি এখনও চীনে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশের বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠানসমূহ সমাজে শান্তি, শিক্ষা ও মানবকল্যাণে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছে।
নতুন বছরে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নববর্ষে পুরনো গ্লানি ও নেতিবাচকতা ভুলে আমরা যেন একটি সাম্যের বাংলাদেশ নির্মাণে এগিয়ে যাই।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পয়লা বৈশাখ হলো আমাদের প্রাণের উৎসব, যা বাঙালির সর্বজনীন মিলনমেলা। বিশ্বের যেখানেই বাঙালিরা আছেন, এ দিনটিতে তারা আনন্দ উদযাপন করেন। গণ অভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে, এই সুযোগ যেন আমরা কাজে লাগাতে পারি। তিনি আরও বলেন, পয়লা বৈশাখ ঐক্যের দিন, সবাইকে আপন করে নেওয়ার দিন। পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীও এবার বড় পরিসরে নববর্ষ উদযাপন করছে। এটি নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। কৃষিকাজের সুবিধার্থে যেভাবে বাংলা সনের সূচনা, সেভাবেই আজও কৃষকরা বাংলা তারিখেই চাষাবাদ করেন। হালখাতা আজও আধুনিক যুগে ব্যবসায়ীদের ঐতিহ্য বহন করে। বৈশাখী মেলায় দেশীয় হস্তশিল্প ও পণ্য তুলে ধরছেন উদ্যোক্তারা। আমাদের সংস্কৃতিকে শুধু দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছড়িয়ে দিতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে এসব ঐতিহ্য নতুনভাবে উপস্থাপন করাই হোক আমাদের লক্ষ্য। নববর্ষ ১৪৩২ সবার জন্য আনন্দ, শান্তি ও নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিক—এই কামনায় বক্তব্য শেষ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta