যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প বিরোধী সবচেয়ে বড় সমাবেশ
‘যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো প্রভাব বা হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না’, ‘ডেমোক্র্যাসি নট ডিক্টেটরশিপ’, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি’, ‘ডিওজিইকে চাকরিচ্যুত করুন’, ‘মাস্ককে মঙ্গল গ্রহে পাঠান’, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রাজতন্ত্র নেই’, ‘রাজতন্ত্র আমরা মানি না’, ‘মাস্ককে বিতাড়িত করুন’—এমন স্লোগানে সারা আমেরিকা কেঁপে উঠেছে।
ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই এবং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহারসহ অন্যান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৫ এপ্রিল শনিবার এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ৫০টি স্টেটে প্রায় ১ হাজার ২০০ বিক্ষোভ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটি ছিল এক দিনের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ।
এই দিন ওয়াশিংটনের আকাশ ছিল মেঘলা এবং হালকা বৃষ্টি ছিল। তবুও হাজার হাজার প্রতিবাদকারী একত্রিত হন। ওয়াশিংটনের কানেকটিকাট অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভকারীদের লাইন জাতীয় মল এলাকার দিকে বিস্তৃত হয়ে যায়। তাদের হাতে ছিল ট্রাম্পের গণবিরোধী কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানানোর প্ল্যাকার্ড।
এছাড়া নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, টেক্সাস, মিশিগান, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, শিকাগো, বস্টন, ফিলাডেলফিয়া, কানেকটিকাট, নিউজার্সি, আরিজোনা, মিনেসোটা, আলাবামা, ওরেগন, ক্যানসাস, কেন্টাকি, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, ডেলাওয়ার, ওহাইও, আইওয়া, সিয়াটল, নর্থ ক্যারোলাইনা, সাউথ ক্যারোলাইনা, উইসকনসিন, নিউ হ্যামশায়ার, রোড আইল্যান্ড, সান ফ্রান্সিসকোসহ বিভিন্ন জায়গায় লাখ লাখ আমেরিকান ‘হ্যান্ডস অফ’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। তারা ট্রাম্প ও ইলন মাস্ককে কঠোর বার্তা দেন।
২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও বিশাল প্রতিবাদ হয়েছিল। তবে ৫ এপ্রিলের ‘হ্যান্ডস অফ’ কর্মসূচিকে আরও বড় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে শুধু অভিবাসী নয়, বরং সাধারণ আমেরিকানরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ফেডারেল অফিসে কয়েক লাখ কর্মচারী ছাঁটাইয়ের পর সাধারণ নাগরিকরা হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
বিক্ষোভের নাম ‘হ্যান্ডস অফ’ ছিল, যার অর্থ হতে পারে, ‘আমাদের স্বাধীনভাবে চলতে দাও’। বিক্ষোভে ১৫০টি গোষ্ঠী অংশ নেয়, এর মধ্যে অন্যতম ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন গণমাধ্যমে বলেন, এই বিক্ষোভের মাধ্যমে ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যদের পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্প নতুন সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) গঠন করে এর দায়িত্ব ইলন মাস্কের হাতে দেন। এরপর থেকে মাস্কের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের ২৩ লাখ কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখেরও বেশি পদ শূন্য হয়ে গেছে। শুক্রবার মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে সামাজিক নিরাপত্তা প্রশাসনের বাইরে শত শত মানুষ অবস্থান নেন।
ন্যাশনাল মলে হোয়াইট হাউসের কাছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কয়েকজন কংগ্রেসম্যান বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তারা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প ও মাস্ক আমেরিকানদের ব্যবসায়িক স্বার্থে জিম্মি করেছেন এবং এই পরিস্থিতি আর চলতে দেওয়া যাবে না।
২০ জানুয়ারি থেকে ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন শুরু করেছেন। তার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রতিফলন ঘটেছে ‘হ্যান্ডস অফ’ প্রতিবাদে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta