ঈদ মিছিলে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার পাপেট নিয়ে কেন এত আলোচনা?
ঢাকায় দীর্ঘ বিরতির পর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে একটি আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে বাংলার সুলতানি ও মোগল আমলের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এই মিছিলে গাধার পিঠে বসে থাকা নাসিরুদ্দিন হোজ্জার একটি পাপেট প্রদর্শন করা হয়।
সোমবার এই পাপেটের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকেই হাস্যরস ও মন্তব্য করেছেন।
কিছু লোক প্রশ্ন তুলেছেন, গাধার পিঠে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার বসে থাকার সঙ্গে ঈদ উৎসবের কী সম্পর্ক? সোমবার সকালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এই বর্ণাঢ্য আনন্দ মিছিল শুরু হয়।
মিছিলটি আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড়, মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া অনেকে বলেন, এমন আয়োজন তারা আগে কখনো দেখেননি এবং তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। মিছিলের সঙ্গে ব্যান্ডদলের বাদ্যযন্ত্রে অনেকে নাচ-গানে যোগ দেন।
এই আনন্দ মিছিলে ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’ সহ বিভিন্ন ইসলামী সংগীতও বাজানো হয়।
মিছিলে আটটি সুসজ্জিত ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি এবং মোগল ও সুলতানি আমলের ঐতিহাসিক পাপেট শো প্রদর্শিত হয়।
পাপেট শোগুলো মিছিলে আসা শিশুদের মধ্যে বিশেষ আনন্দ সৃষ্টি করে। শিশুদের প্রিয় চরিত্র আলাদীন, আলী বাবা-চল্লিশ চোর, এবং নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মতো পরিচিত পাপেটের উপস্থিতি ছিল।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা একজন বিখ্যাত দার্শনিক এবং হাস্যরসাত্মক চরিত্র হিসেবে পরিচিত। তার হাস্যরসাত্মক গল্প এবং উক্তি তাকে শত বছর ধরে মানুষের জীবনে স্মরণীয় করে রেখেছে।
এই চরিত্রটি শিশুদের কাছে জনপ্রিয় এবং ঈদ আনন্দ মিছিলে তার পাপেট দেখে তারা আনন্দিত হয়েছে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এটি বিনোদন সৃষ্টি করেছে, এবং এটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
পাপেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যে, কিছু লোক দাবি করেছেন যে, এটি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাদৃশ্য।
গোঁফবিহীন নাসিরুদ্দিন হোজ্জা এবং জামায়াত আমিরের মধ্যে চেহারার সাদৃশ্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তবে পাপেটের মূল শিল্পী, জাহিদুল হক এই দাবিকে খারিজ করেছেন।
তিনি বলেন, পাপেটটি তৈরির জন্য একটি আরবি বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ছবি নেওয়া হয়েছিল এবং এতে কিছু মিল পাওয়া গেলেও, এটি কাকতালীয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় বিভিন্ন চরিত্র ছিল, কিন্তু পরে আমরা শিশুদের জন্য আরব্য রজনী বা তাদের প্রিয় চরিত্রগুলো যুক্ত করতে চেয়েছিলাম। এটি শুধুমাত্র শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য ছিল, এর কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নাসিরুদ্দিন হোজ্জা বাংলা সাহিত্যের একটি মেটাফোরিক চরিত্র। শিশুরা এই চরিত্রটি পছন্দ করে, এবং তাই আমরা এটি তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, এই আয়োজনটি ঢাকাবাসী ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে এবং এটি নিয়ে সমালোচনার কোনো সুযোগ নেই।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta