নিরপরাধ ক্যাডার অফিসারদের গেজেটভুক্ত করার আবেদন
বর্তমানে সারা দেশে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মাগুরায় আট বছরের শিশু আছিয়ার হৃদয়বিদারক ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে শোকিত করেছে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলি মিডিয়ায় উঠে আসছে। দেশবাসী ক্ষোভে উত্তাল, এবং নারীরা নিরাপত্তা এবং নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে। ধর্ষকদের শাস্তির দাবিও আরও জোরাল হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান না থাকায় এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, আবার কেউ কেউ মনে করেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতায় এক ধরনের বিচারহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে অপরাধীরা আরও সাহস পাচ্ছে। অপরাধী যে-ই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা জরুরি, এবং তার শাস্তি দ্রুত কার্যকর করা উচিত। তবে, এই সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কেন এমন ঘটনা বারবার ঘটছে? কেন শিশুদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না? নারী নির্যাতন ও সহিংসতার পরিমাণ কেন এত বেড়ে যাচ্ছে? এটি কি সাম্প্রতিক প্রবণতা, না কি এটি পূর্বের অভ্যাসের অংশ? বাংলাদেশে নারী নির্যাতন নতুন নয়। দীর্ঘকাল ধরে এসব ঘটনা ঘটে আসছে। মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা আমাদের জাগ্রত করে তোলে, এবং আমরা ক্ষোভে ফেটে পড়ি। তবে, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে শুধু আইন যথেষ্ট নয়, আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন প্রয়োজন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, সেখানে নারী নির্যাতনের ঘটনা মোটেও মানানসই নয়।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা নতুন বাংলাদেশের আদর্শের বিরোধী।’ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য কী করা উচিত? এর উত্তর আমরা ড. ইউনূসের চিন্তা ও দর্শনে খুঁজে পেতে পারি। ড. ইউনূস মনে করেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা। এর জন্য নারীর ক্ষমতায়ন অত্যন্ত জরুরি। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেলে নারীর ক্ষমতায়নের একটি সুসংগঠিত পরিকল্পনা রয়েছে, যা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল বাস্তবায়ন করার পর, নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও নারী নিপীড়ন কিছুটা হলেও কমেছে। এই মডেল যদি দেশের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে নারীর প্রতি সহিংসতা কমবে।
১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল শুরু করেছিলেন ড. ইউনূস, যার একটি প্রধান দিক ছিল নারীর ক্ষমতায়ন। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের ৯০ শতাংশ গ্রাহকই নারী। গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা ও কর্মসংস্থানের ৯৬ শতাংশেরও বেশি অংশগ্রহণকারী নারী। এটি একটি নিঃশব্দ বিপ্লব যা গ্রামাঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করছে। যখন নারীরা শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হন, তখন তাদের ওপর সহিংসতার পরিমাণ কমে যায়। বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসায়ের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে, যা নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি তাদের মর্যাদাও বৃদ্ধি করেছে।ড. ইউনূসের দর্শন অনুযায়ী, সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা গেলে নারী নির্যাতন অনেকটাই কমবে। নারীদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক একটি সফল মডেল তৈরি করেছে, যা নারীর অধিকার আদায়ের পথ সুগম করেছে। এর ফলে সারা দেশে নারী নির্যাতন বন্ধের সম্ভাবনা আরও বেশি হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ জনগণ নারী, তাই দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের অবদান অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। ড. ইউনূসের দর্শনকে বাস্তবায়ন করলে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।এমনকি নারীর প্রতি সহিংসতা ও নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য আমাদের সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে, এবং সেটা করতে পারলে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের পথে এক বড় পদক্ষেপ হবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta