নারী ও শিশু নির্যাতন
দেশের ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মানে, প্রতি বিচারকের ওপর গড়ে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি মামলা রয়েছে। একই সঙ্গে শিশু আদালতে ৪২ হাজার এবং মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে ৫ হাজারের বেশি মামলা চলমান রয়েছে।
বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দেশে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে অনুভূত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আইন সংশোধনের কথা বলা হলেও, শুধু আইন পরিবর্তন করেই দ্রুত বিচার সম্ভব নয়। এসব ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্যান্য মামলার চাপ কমানো এবং বিচারকদের লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধির পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন।
আইনজ্ঞরা বলছেন, ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বব্যাপী যে নীতি অনুসৃত হয় তা হলো, অপরাধী পার পেয়ে গেলেও নিরপরাধী কাউকে সাজা দেওয়া যাবে না। তাই সাত দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার ধারণা ভুল। প্রকৃতপক্ষে, বিচার ব্যবস্থার দ্রুততা বাড়াতে মূল সমস্যাগুলোতে কাজ করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতনের ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে ২০ হাজার ১৮৩টি মামলা এবং স্থগিত রয়েছে ১ হাজার ৬০৭টি মামলা। এছাড়া, বিচারাধীন ৩২ হাজার ৯৭২টি মামলা পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরা শিশু আদালত ও মানব পাচার মামলাও পরিচালনা করেন। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু আদালতে ৪২ হাজার ৫৬৯টি এবং মানব পাচার মামলায় ৫ হাজার ২১৯টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এছাড়া, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে শিশু অপরাধের বিচার আলাদা করার জন্য নতুন শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছেন। এই বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিচারকদের সংগঠন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে আরও ২০০টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলো নানা কারণে তাদের কাজ ঠিকভাবে করতে পারছে না। অতিরিক্ত মামলা ও বাস্তবতার কারণে এসব ট্রাইব্যুনালে মামলার চাপ বেড়ে গেছে, যা দ্রুত বিচারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।
হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, সরকার বিচার বিভাগকে এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিলেও এটি বাস্তবসম্মত নয়। বিচারকরা জবানবন্দি, সাক্ষ্য এবং জেরা সহ অনেক ধাপে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তিনি জানান, বর্তমানে অনেক বিচারক একে অপরের রুম শেয়ার করছেন এবং অনেক জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকও নেই। এ কারণে বিচার দ্রুত হওয়া সম্ভব নয়। বিচারকদের সংখ্যা বাড়ানো এবং তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta