সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরগরম সার্বিয়া
শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সার্বিয়ায় আবারও সরকারবিরোধী বিক্ষোভ জোরালো হয়েছে।
শনিবার বেলগ্রেডে, প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার ভুচিচের ১২ বছরের শাসনের অবসান এবং আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
সংবাদে জানানো হয়েছে, এটি দেশের সাম্প্রতিককালের অন্যতম বৃহত্তম বিক্ষোভ, যেখানে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। ‘আমরা নির্বাচন চাই’ স্লোগানে গর্জে ওঠা জনতা সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ছাত্র নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলন ভুচিচ সরকারের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করেছে।
প্রেসিডেন্ট ভুচিচ তার ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বলেন, আগাম নির্বাচন দাবিদার বিক্ষোভকারীরা দেশের দখলের জন্য বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি আরও বলেন, “তারা সার্বিয়াকে উৎখাতের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।”
এর আগে, শুক্রবার বেলগ্রেডের হাই কোর্ট সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে।
সার্বিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “দোষীদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভুচিচের দ্বিতীয় মেয়াদ ২০২৭ সালে শেষ হবে। ওই বছরই সংসদ নির্বাচনের কথা থাকলেও তিনি আগাম নির্বাচন নিয়ে রাজি নন। তার দল ‘সার্বিয়ান প্রগ্রেসিভ পার্টি’ ও মিত্ররা ২৫০ আসনের মধ্যে ১৫৬ আসন দখল করে রেখেছে।
উত্তরের শিদ শহর থেকে এসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ৩৭ বছর বয়সী কৃষক স্লাজানা লোজনোভিচ বলেন, “প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির বশবর্তী হয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে ভুচিচ ক্ষমতা ছাড়বে না। একমাত্র নির্বাচনই সমাধান।”
বিরোধীরা অভিযোগ করেন ভুচিচ সরকার অপরাধ ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিরোধীদের দমন করে, যদিও ক্ষমতাসীনরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ভুচিচ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র, এবং ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় সার্বিয়া অংশ নেয়নি।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর নভি সাদ রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৬ জন নিহত হওয়ার পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্র, রাজনীতিবিদ, শ্রমিক ও কৃষকরা রাজপথে নামে, যার প্রভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিস পদত্যাগ করেন।
শনিবার বিক্ষোভ শেষে, আয়োজকরা জনতাকে ‘স্বাধীনতা নিজের হাতে নেওয়ার’ আহ্বান জানান এবং আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ শুরু করার সংকেত দেন।
সমাবেশ শেষে ইনস্টাগ্রামে আয়োজকরা বলেন, “সরকারের কাছে দাবি পূরণের ও উত্তেজনা কমানোর জন্য যথেষ্ট সময় ছিল, কিন্তু তারা জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও দমন পন্থা বেছে নিয়েছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে তার দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।” সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি, এপি, ডয়েচে ভেলে, ফ্রান্স২৪
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta