ঢাকায় বাফুফের ট্রায়ালে ১৪টি দেশের ৫২ তরুণ খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করছে
ওবায়দুল কাদেরের ঘড়ি ও নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মন্ত্রণালয় ও রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা চলছিল। নিজেই দাবি করেছিলেন, ১০ লাখ টাকার নিচে কোনো ঘড়ি তিনি পরেন না। নিজের বাসায় এক প্রকার ঘড়ির শোকেস তৈরি করেছিলেন, যেখানে বিশ্বের সেরা ব্র্যান্ডের দামি ঘড়িগুলো সাজানো ছিল। তিনি গর্ব করে বলতেন, এক মাসে এক ঘড়ি দুইবার পরেন না। তার কাছে শত কোটি টাকার ঘড়ি ছিল। কিন্তু এক সময় বাংলার বাণীতে তিনি নিউজপ্রিন্ট বিছিয়ে ঘুমাতেন, দুবেলা খাওয়ার টাকাও জোটতো না। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে না পেরে দুইবার উচ্ছেদ হয়েছিলেন। মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর জীবনযাত্রায় একধরনের আলোকপাত হয়। তিনি বিলাসবহুল পোশাক, ঘড়ি, পারফিউমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। উপহার হিসেবে ঘড়ি পেতে চেয়েছেন, যারা দেননি তাদের কাছে নারীদের পাঠাতেন। ঠিকাদারদের মধ্যে এমন একটি ছড়া প্রচলিত ছিল— ‘বিল পেতে চাইলে দাও ঘড়ি বা নারী।’ নারীদের প্রতি তার দুর্বলতা সবার জানা ছিল। নারীদের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি কাজের কথা ভুলে যেতেন।
ঠিকাদারদের কাছ থেকে তিনি বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের দামি ঘড়ি উপহার পেতে পছন্দ করতেন। বড় কোনো কন্ট্রাক্ট পাস করিয়ে দেওয়ার বদলে কাদের ঘড়ি নিতেন। মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদাররা এই ব্যাপারে অবগত ছিল।
ওবায়দুল কাদেরের ঘড়িগুলোর দাম কখনোই ১০ লাখ টাকার নিচে ছিল না। রোলেক্স, পাটেক ফিলিপ, শেফার্ড, উলিস নাদা, লুই ভিটন এসব ব্র্যান্ডের ঘড়ি ছিল তার সংগ্রহে। এসব ঘড়ি নিজে কিনতেন না, বরং ঠিকাদারদের থেকে পেতেন। শুধু ঘড়ি নয়, তিনি দামি স্যুট, শার্ট পরতেও অভ্যস্ত ছিলেন। একসময় যেখানে তিনি পুরোনো কাপড় পরতেন, সেখানে পরবর্তীতে কেবল ব্র্যান্ডেড স্যুটই পরতেন। সর্বশেষ তাকে ব্যক্তিগত ডিজাইনের আরমানির স্যুটে দেখা গেছে, যার মূল্য ৩০ হাজার ডলার বা প্রায় ৩৮ লাখ টাকা।
জুতাতেও তিনি খুবই ব্যয়বহুল ছিলেন। কিন্তু তাঁর বৈধ কোনো আয় ছিল না। তিনি কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন না, সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এই অবস্থায় তিনি কীভাবে এত ব্যয়বহুল জিনিস পরতেন তা প্রশ্ন থেকেই যায়। নিজের বিলাসবহুল পোশাক নিয়ে তিনি গর্ব করতেন এবং সাংবাদিকদের দেখাতে ভালোবাসতেন।
নারীদের প্রতি তার আকর্ষণ প্রকাশ্যে ছিল। দলের সাধারণ কর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করতে পারত না, কিন্তু নারী কর্মীদের তিনি সহজেই কাছে আসতে দিতেন। ছাত্রীদের কলেজে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি আগ্রহী ছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তার নারীদের সঙ্গে ছবি শেয়ার হতো। চলচ্চিত্র জগতের নায়িকাদের প্রতি তার বিশেষ স্নেহ ছিল। তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে যাওয়া, ছবি তোলা, গল্প করা তার শখ ছিল। নারীদের পটানোর জন্য তিনি কবিতা লিখতেন এবং সিনেমা বানানোর কথা বলে নায়িকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলতেন।
‘গাঙচিল’ নামে একটি গল্প লিখে তিনি ২ কোটি টাকা দিয়ে একটি ছবির জন্য পরিচালক নিয়োগ করেন। নায়ক ছিল ফেরদৌস, নায়িকা পূর্ণিমা। এই অজুহাতে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পূর্ণিমার সঙ্গে ছিলেন। মাহিয়া মাহিসহ অন্যান্য নায়িকাদের নামও আলোচিত হয়েছে, যারা তার কাছ থেকে সুবিধা পেতেন। দলেও এ বিষয়টি গোপন ছিল না।
দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন এবং তার বড় অংশ এসব নারীদের প্রতি খরচ করেছেন। তার সঙ্গে অনেক সময় কাটাতেন নারীদের সঙ্গে চ্যাটিং করে। বিদেশ সফরের সময়ও নারীরা তার সঙ্গে থাকত। পরে তাদের আওয়ামী লীগের সদস্য করতেন এবং বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ করাতেন।
১২ বছর মন্ত্রী এবং ১০ বছর সাধারণ সম্পাদক থাকার মাধ্যমে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছেন। তার এ সম্পদের কারণে নারীদের প্রতি তার আসক্তি স্বাভাবিক ছিল। তার ঘনিষ্ঠদের মতে, তার এত টাকা রাখার জায়গা ছিল না, তাই নারীদের পেছনে খরচ করতেন।
গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। জাহাঙ্গীরের বাগানবাড়িতে তিনি প্রায়ই যেতেন এবং সেখানে নারীর উপস্থিতি থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। নারীদের সঙ্গে আলাদা সাক্ষাৎ পেলে দলের কমিটিতে জায়গা পাওয়া সহজ হত। অনেক নারী তার সখ্যতায় কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের রাজনীতিতে একটি বিতর্কিত নাম। দুর্নীতি ও লুটপাটের পাশাপাশি নারীপ্রীতির কারণে তিনি জনমনে বিরক্তি সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তার বিদেশেও ব্যাপক সম্পদ রয়েছে যা পাচার করা হয়েছে। সরকার এই অর্থ উদ্ধার করার জন্য কার্যক্রম চালাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta