‘বড়লোকদের সন্তানরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, ‘ধনী পরিবারের সন্তানরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না।’
শনিবার (১২ এপ্রিল) ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে একটি মতবিনিময় সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আখতারুল ইসলামসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ জানান, ‘প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স প্রোগ্রামের ওপর আমরা কাজ করব। শিক্ষার্থীরা কীভাবে আউটসোর্সিং, রন্ধনশিল্প, কারিগরি শিক্ষা ও অন্যান্য কোর্সে যুক্ত হতে পারে, সে পরিকল্পনা নিচ্ছি। আমরা একটি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কথা ভাবছি—বিতর্ক, খেলাধুলা, ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অর্থায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক কলেজের গভর্নিং বডিগুলো এখন রাজনৈতিক প্রভাবের কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে, যেন জমি দখলের মতো পরিস্থিতি। এমন চলতে থাকলে গভর্নিং বডির প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও শিক্ষাব্যবস্থায় এমন অনিশ্চয়তা মেনে নেওয়া যায় না।’
শিক্ষকদের পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে উপাচার্য বলেন, ‘একজন কলেজ শিক্ষক সমাজে সম্মানীয় হলেও তাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত করুণ। আমি যে কলেজে পড়েছি, সেখানে এমন অবস্থা হয়েছে যে জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও প্রিন্সিপালের সঙ্গে দেখা করতে চায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের নিজেদের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে হবে। দোষারোপ না করে, রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে, শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তাহলেই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বাস্তবে দেখা যাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘এক সময় বিশ্বের নানা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসত—ইরান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের শিক্ষার্থীরাও এখানে পড়ত। অথচ এখন আমাদের দেশের মানুষই এসব দেশে চাকরির খোঁজে যাচ্ছে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম আমানুল্লাহ
তিনি বলেন, ‘আমাদের পতনের অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত রাজনীতি ও সুশাসনের অভাব। এই দুই বিষয়ে পরিবর্তন আনতে পারলে দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত হবে।’
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রাইভেট চাকরি বা আয়ের উৎসে যুক্ত। কেবল শিক্ষক ডাকলেই তারা ক্লাসে ফিরবে না। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়াতে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে।’
ইনকোর্স ও অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইনকোর্স ও ভাইভা নিয়ে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চায় ইনকোর্স কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হোক। এজন্য আমরা একটি ইনকোর্স ইউনিট গঠন করছি এবং কয়েক মাস পর পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেব ইনকোর্স চালু রাখা দরকার কি না।’
সভায় তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে আহ্বান জানান—সকলকে একসঙ্গে কাজ করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta