শ্রমিকদের পুনর্বাসন এবং বকেয়া মজুরি পরিশোধসহ ৭টি দাবি আইবিসির
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পুনর্বাসন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং বকেয়া মজুরি পরিশোধের পাশাপাশি ৭টি দাবি জানিয়েছেন।
১২ এপ্রিল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আইবিসির এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবিগুলি তুলে ধরা হয়। আইবিসির সভাপতি তৌহিদর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার।
আইবিসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের অন্তর্গত বাংলাদেশের জাতীয় শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম, যা বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত ৭০-৮০ শতাংশ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করছে। শ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা এবং সুরক্ষার জন্য আইবিসি দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছে।
আইবিসির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আখতার বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আমাদের শিল্পখাতের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় এটি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা সম্ভব হয়েছে। যদিও এটি একটি অস্থায়ী স্বস্তি, তবুও ভবিষ্যতের জন্য অস্থিরতা রয়ে গেছে। আমরা আশা করি, সরকার ভবিষ্যতে আরও কার্যকরভাবে এই সমস্যার সমাধান করবে। এর পাশাপাশি অটোমেশন, ন্যায্য রূপান্তর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্রমিকরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক সমস্যা ছাড়াও পোশাক শিল্প বর্তমানে অনেক সংকটে রয়েছে। গত ৮-৯ মাসে প্রায় ৭০-৮০টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাদের অধিকাংশ এখনও পুনর্বাসনের সুবিধা পায়নি। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও শ্রমিকরা মজুরি, সার্ভিস বেনিফিট, ইনক্রিমেন্ট, চাকরি রক্ষা নিয়ে আন্দোলন করছেন, যা মাঝে মাঝে সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সরকার ঘোষিত ৯ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি এখনো অধিকাংশ কারখানায় কার্যকর হয়নি। ঈদকে সামনে রেখে ১৫ দিনের চলতি মাসের মজুরি এবং উৎসব বোনাস পরিশোধের নির্দেশনা ছিল, কিন্তু বহু কারখানায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে, বাস্তবায়ন, তদারকির অভাব এবং মালিক পক্ষের অনমনীয়তার কারণে এটি সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পাশাপাশি, শ্রমিকদের ওপর মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার এবং পুলিশি হয়রানি বেড়েছে। ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ঘটনায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পরিপন্থি।
আইবিসির নেতারা অভিযোগ করেন, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াতেও নানা বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৫০টি ট্রেড ইউনিয়নের আবেদন ঝুলে রয়েছে। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যকর ভূমিকার অভাব স্পষ্ট হচ্ছে। শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে, তবে বর্তমানে এটি শ্রমিক স্বার্থবিরোধী হয়ে উঠেছে।
এ অবস্থায়, আইবিসি সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধান, ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের পুনর্বাসন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, বকেয়া মজুরি পরিশোধ, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ এবং শ্রম আইন সংশোধন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও শ্রমিকবান্ধব করার দাবি জানিয়েছে। এছাড়া, অটোমেশন, ন্যায্য রূপান্তর ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এসব দাবির পক্ষে আইবিসি ১ মে একটি মহাসমাবেশের আয়োজন করবে।
তারা বলেন, শ্রমিকদের অধিকার উপেক্ষা করে মালিকস্বার্থকেন্দ্রিক নীতি গ্রহণ করলে শিল্পের স্থিতিশীলতা, উৎপাদন ও রপ্তানি টেকসই হবে না। এখন সময় শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন, যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, কোষাধ্যক্ষ কামরুল হাসান, নারী বিষয়ক সম্পাদক চায়না রহমান, যুব বিষয়ক সম্পাদক কায়সারুন্নবী রুবেল, কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, রাশেদুল আলম রাজু প্রমুখ।
আরএস
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta