সীমান্তের ভয় আতাউল্লাহ
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ঙ্কর শত্রু আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) প্রধান আতাউল্লাহ। তার পুরো নাম আতাউল্লাহ, এছাড়াও তিনি 'আবু আমর জুনুনি' নামেও পরিচিত। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তিনি 'মোস্ট ওয়ান্টেড' হিসেবে তালিকাভুক্ত।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু কোনারপাড়া এলাকায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) এক কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ৪৯ জন আসামির মধ্যে আতাউল্লাহর নাম উঠে আসে।
আতাউল্লাহ মিয়ানমারে বিদ্রোহী সংগঠন 'হারাকাহ আল ইয়াকিন' গঠন করেন, পরে এটি 'আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' বা আরসা নামে পরিচিত হয়। ২০১৭ সালে তার কার্যক্রমের কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনপীড়ন শুরু হয়, যার ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, 'রোহিঙ্গাদের নিয়ে কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আতাউল্লাহর নেতৃত্বে মিয়ানমারের পুলিশ চেকপোস্টে হামলা হয়। এই হামলার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে নিপীড়ন চালায় এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।' এর ফলে আতাউল্লাহ রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতর্কিত চরিত্রে পরিণত হয়।’
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ' তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, আরসা মূলত সৌদি আরবে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। মক্কায় বসবাসরত ২০ জন রোহিঙ্গা নেতা এই সংগঠনটি গঠন করেন এবং তাদের যোগাযোগ রয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতের সঙ্গে।
আতাউল্লাহ ওরফে আবু আমর জুনুনি, যার বাবা মিয়ানমারের নাগরিক ছিলেন, মক্কায় বড় হয়ে ওঠেন। সেখানে মাদরাসায় পড়াশোনা শেষে সৌদি আরবে 'ফেইথ মুভমেন্ট' নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে তিনি সৌদি আরব ছেড়ে আরাকান চলে আসেন।
২০১২ সালের ২৮ মে, এক বৌদ্ধ নারীর বাড়িতে ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর পর গুজব ছড়িয়ে আরাকানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়, যাতে ৮০ জন নিহত হয় এবং ১ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
আতাউল্লাহ পরবর্তীতে 'হারাকাহ আল ইয়াকিন' নামে একটি সংগঠন গঠন করেন, যার প্রধান সামরিক কমান্ডার ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে 'হরকাতুল ইয়াকিন' সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে এটি 'আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' নামে পরিচিত হয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট, আতাউল্লাহর নেতৃত্বে আরসা পুলিশ চেকপোস্টে হামলা চালায়, যা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আক্রমণ এবং রোহিঙ্গাদের বিপর্যয়ের কারণ হয়।
আতাউল্লাহ একসময় আরএসও সদস্য ছিলেন এবং আফগানিস্তান, কাশ্মীর, উজবেকিস্তানে যুদ্ধ করেছেন। তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠনের যোগাযোগ রয়েছে, বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কাশ্মীর এবং সিরিয়ায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি : সীমান্তের শূন্যরেখায় আরসা ঘাঁটি গড়ে তোলে এবং সেখানে গোপন অস্ত্র কারখানা ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছিল। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর, বান্দরবানের তুমব্রু কোনারপাড়া এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানে গোয়েন্দা কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী নিহত হন। ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, আদালতে ৪৯ জনকে আসামি করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় এবং আতাউল্লাহ সহ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta