সর্বজনীন পেনশন স্কিম ব্যর্থ
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার পর, ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও এই স্কিমে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর স্বৈর সরকারের পতন ঘটে এবং পরবর্তী সময়ে নতুন নিবন্ধন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাবক্রিপশন ফি বা চাঁদা পরিশোধেও বকেয়া পড়েছে। প্রবাসীদের স্কিমে সবচেয়ে কম আগ্রহ দেখা গেছে। বর্তমানে চারটি স্কিমে মোট ১০০ কোটি টাকার মতো জমা পড়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। সর্বজনীন পেনশন স্কিম বর্তমানে একটি ব্যর্থ ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে।
২০২৩ আগস্ট থেকে ২০২৪ আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে প্রায় ৪ লাখ মানুষ এই স্কিমে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি এবং দেশে প্রায় ৩৩ লাখ পোশাক শ্রমিক আছেন। এই খাতের প্রায় ৯৯ শতাংশ শ্রমিকই এই স্কিমে নিবন্ধন করেননি, যা এক জরিপে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) সম্প্রতি একটি জরিপ চালিয়েছে, যার ফলাফল অনুযায়ী, ৯০.৬ শতাংশ কর্মী এই স্কিমে আগ্রহী নন। ৬.৭ শতাংশ কর্মী মনে করেন এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই পেনশন ব্যবস্থা নয়, এবং ২.৭ শতাংশ কর্মী এই স্কিম সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে পেনশন স্কিমের প্রচারের জন্য বিপুল অর্থ খরচ করেছে সরকার, কিন্তু বেসরকারি খাতের কর্মীদের কাছে এর সুফল জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্কিমটি আরও কম কার্যকর হয়ে পড়েছে। জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা এবং প্রচারের অভাবে অনেকেই স্কিমের সুবিধা সম্পর্কে জানেন না। এজন্য সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন করে প্রচার চালানোর প্রয়োজন রয়েছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৪১ জন নিবন্ধন করেছেন। আগের বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধন সংখ্যা ছিল ৪ লাখ, কিন্তু ২০২4 সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নতুন নিবন্ধন হয়নি বললেই চলে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চারটি ক্যাটাগরি ছিল—প্রবাসী, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এবং স্বল্প আয়ের জনগণ। তবে দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অনেকেই এখনও জানেন না স্কিমের সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা প্রবাসীদের স্কিমের। এতে নিবন্ধিত সংখ্যা মাত্র ৯১৩ জন। সাবক্রিপশন ফি হিসেবে জমা পড়েছে ৯৯ কোটি ৪২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। স্বল্প আয়ের মানুষের স্কিম ‘সমতায়’ নিবন্ধিত ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮২ জন। প্রগতি এবং সুরক্ষা স্কিমে যথাক্রমে ২২ হাজার ৪১০ ও ৬৩ হাজার ১৮৪ জন নিবন্ধন করেছেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর মানুষের মধ্যে আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ঈদের পর আমরা নতুন প্রচার অভিযান শুরু করব, আশা করি আগ্রহ বাড়বে।’ সাবক্রিপশন ফি বকেয়া পড়ার পেছনে রোজগার কমে যাওয়াকে একটি কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta