এই সপ্তাহে ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ?
চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান অনেকের কাছে আতঙ্কের কারণ হিসেবে পরিচিত। শেখ হাসিনা সরকারের সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনায় এসেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ফোনে আড়ি পেতে কল রেকর্ড ফাঁস, অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলায়ও তাঁর নাম উঠে এসেছে।
তিনি ৭১-এর গণহত্যায়ও অভিযুক্ত। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। তাঁর কর্মকাণ্ড ও আচরণ নিয়ে আলোচনা এবং নতুন তথ্য প্রকাশ হতে থাকছে।
সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভুঁইয়া (আইকেবি) তাঁর ফেসবুক পেজে ‘বিজিবি, র্যাব, এসএসএফ ও আনসার নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা’ শিরোনামে ছয় পর্বের লেখায় জিয়াউল আহসান সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য শেয়ার করেছেন।
আইকেবি জানিয়েছেন, জিয়াউল আহসান তাঁকে মেরে ফেলতে পারে—এমন তথ্য জানার পর তিনি আতঙ্কিত হন। একদিন সেনাপ্রধানের কার্যালয়ে বোমা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি লিখেছেন, র্যাব কিভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে লিপ্ত ছিল, সেই ব্যাপারেও বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। ২০১২ সালের ২৫ জুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জেনারেল আইকেবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলেন, তিনি র্যাব থেকে সেনা সদস্যদের প্রত্যাহার করতে চান।
এ সময় সেনা অফিসাররা পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নৈতিক বিচ্যুতি ঘটাচ্ছিল। শেখ হাসিনাও সম্মতিসূচক মন্তব্য করেছিলেন, র্যাব জাতীয় রক্ষী বাহিনীর চেয়েও খারাপ। তবে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়নি। পরে শেখ হাসিনা র্যাবে আরও সেনা সদস্য পাঠানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
আইকেবি আরো জানান, তিনি জিয়াউল আহসানকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ‘ক্রসফায়ার’ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। পরে ঢাকার সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জিয়াউল আহসানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
সাবেক সেনাপ্রধান আরো জানান, একসময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, প্রধানমন্ত্রীর মিলিটারি সেক্রেটারি ও অ্যাসিস্ট্যান্ট মিলিটারি সেক্রেটারির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে জিয়াউল আহসান আইকেবির নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন।
আইকেবি সেনাবাহিনীতে সেনা কর্মকর্তাদের র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীতে নিয়োগ সম্পর্কে বলেন, “আমি (সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর) অবাক হয়ে দেখলাম যে, ২০-২১ বছরের তরুণ অফিসারদের এমন সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা তাঁদের মূল সামরিক সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।”
তিনি র্যাব বিলুপ্তির পক্ষে মতামত জানিয়ে বলেছেন, “বর্তমানে র্যাবের বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। আমি সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করব, যেন তিনি সরকারকে র্যাব ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন।”
আইকেবি তাঁর লেখায় আরো জানান, তিনি র্যাবের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাবধান করার চেষ্টা করতেন, তবে জিয়াউল আহসান তাকে কাজে বাধা দিতেন।
তিনি বলেন, “র্যাবে নতুন দায়িত্বে আসা কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ডে উৎসাহিত করার জন্য জিয়াউল আহসান দোষী ছিলেন। কয়েকজন অফিসার তাঁর নির্দেশ অমান্য করে হত্যা না করার সিদ্ধান্ত নেন।”
আইকেবি আরো বলেন, তিনি র্যাব, ডিজিএফআই এবং বিজিবিতে আর সেনা কর্মকর্তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta