জাসদের একাংশ আরেক অংশকে সহ্য করতে পারে না কেন: ব্যারিস্টার ফারাহ খান
আমরা যদি আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সাথে জোট বেঁধে রাজনীতি করতে পারি, তবে আমাদের নিজেদের দলের মধ্যে বিভাজন কেন থাকবে? জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিভেদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ব্যারিস্টার ফারাহ খান।
শনিবার (১৫ মার্চ) বরিশাল প্রেসক্লাবে, খুলনা বিভাগের পর বরিশাল বিভাগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে মতবিনিময় সভা করেন ব্যারিস্টার ফারাহ খান।
তিনি স্বাধীনতার রূপকার নিউক্লিয়াসের প্রধান সিরাজুল আলম খান দাদার ভাতিজি। ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা যে সোনার বাংলা গড়ার জন্য জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন, সে স্বপ্ন স্বাধীনতার পরেও পূর্ণতা পায়নি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছিলো, মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিলো, দেশজুড়ে লুটপাট শুরু হয়েছিলো এবং একদলীয় শাসন কায়েম করা হয়েছিলো। আমরা এমন স্বাধীনতা চেয়েছিলাম না, সেজন্যই ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খান দাদার নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। জাসদ একটি আদর্শ ভিত্তিক দল হলেও ব্যক্তিগত স্বার্থে তা বিভক্ত হয়ে এখন ব্র্যাকেট বন্দি হয়ে গেছে। জাসদ নেতা নয়, কর্মী দল।
তিনি বলেন, জাসদকে পুনরায় কর্মীদের কাছে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা কোন নেতাকেই বাদ দেব না, তবে এখন নেতাদের ঐক্য নয়, কর্মীদের ঐক্য প্রয়োজন। কারণ নেতাদের ঐক্য আমরা ১৯৯৭ সালে দেখেছি, কিন্তু সেদিন ঐক্য ভেঙে গেছে নেতাদের স্বার্থে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে। তাই কর্মীদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং পরবর্তীতে তারা নিজেদের নেতা নির্বাচন করবেন।
শনিবার বরিশাল প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের বিভক্ত গ্রুপের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। সভার সভাপতিত্ব করেন সাবেক সংসদ সদস্য সরদার রশিদ।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই তরুণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জাসদ গঠন করেছিলেন। কিন্তু শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকার আমাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার করেছে। কখনো আমরা আওয়ামী লীগের, কখনো বিএনপির বা কখনো এরশাদের শক্তিকে শক্তিশালী করেছি, তবে নিজেদের শক্তি তৈরি করতে পারিনি। ৭২ সালে আমরা ছিলাম এক বিশাল বটগাছ, কিন্তু এখন ৫৩ বছর পর আমরা হয়ে গেছি পরগাছা। বড় দলের নেতারা আমাদের একটি বা দুটি আসন দেয়, আর আমরা সেটি নিয়েই খুশি হয়ে যাই।
তিনি বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সাথে জোট বেঁধে রাজনীতি করতে পারি না, কিন্তু নিজেদের দলের জন্য কেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারবো না? জাসদ ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং বড় দলের সাথে জোট না বেঁধে নিজেদের শক্তি তৈরি করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বিএনপি বা আওয়ামী লীগের সাথে জোট করতে পারি, তবে কেন আমরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে পারবো না? কেন আমরা নিজেদের ভুল ভুলে একে অপরকে ভাইয়ের মতো গ্রহণ করতে পারবো না? তিনি নেতাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন, যেন তারা দলটির ঐক্যের জন্য সাহায্য করেন।
ব্যারিস্টার ফারাহ খান বলেন, সিরাজুল আলম খান বুঝতে পেরে নিজে উদ্যোগী হয়ে তাকে জীবদ্দশায় দলের রাজনীতিতে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি তার দাদার সঙ্গে বহু আলোচনা করেছেন এবং তার কাছে ওয়াদা করেছেন, যে তিনি যেকোনো বাধা সত্ত্বেও জাসদকে ঐক্যবদ্ধ করবেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাকে দলের ভেতর থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যদি আমি হেরে যাই, তাহলে জাসদ হেরে যাবে, লক্ষ লক্ষ কর্মীর স্বপ্ন ভেঙে যাবে। এই প্রজন্মের পর আর কেউ নেই যারা দলের ঐক্যের জন্য লড়াই করবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার জাসদের নেতাকর্মীরা, যারা একসাথে হয়ে জাসদকে ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন। সভায় ব্যারিস্টার ফারাহ খানের সাথে স্লোগান তুলে সবাই বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য জাসদের ঐক্য।’
মুনতাসির/সাএ
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta