ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে
দেশে ভুল নীতি এবং স্বচ্ছতার অভাবের কারণে জ্বালানি মূল্যের সমন্বয় করা হচ্ছে, যা শিল্প খাতকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। গ্যাসের অভাবের ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপির ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। গ্যাস সরবরাহ স্থিতিশীল না হলে উৎপাদনেও বাধা আসবে বলে তাদের আশঙ্কা।
গতকাল রাজধানীর মহাখালীয়ে ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: অন্তর্বর্তী সরকার কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সভাপতিত্ব করেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়েত প্রিয়তি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম, জলবায়ু ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা, বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ, বিটিএমই পরিচালক রাজিব হায়দার ও বিকেএমইএ সহসভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব।
এম শামসুল আলম বলেন, বাংলাদেশ এখন আমদানির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্যাসিবাদের মতো কাজ করছে এবং জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করছে। তারা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এখন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার পথে, মালিকরা কর বা কিস্তি দিতে পারছেন না। আমদানির ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা বাড়ছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মনোয়ার মোস্তফা জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ হয়, কিন্তু বাজেটে এই খাতে পরিবেশ বান্ধব নীতির কোনো উল্লেখ নেই, যা খুবই হতাশাজনক।
ফয়সাল সামাদ বলেন, গত ২০ বছর ধরে কোনো সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া শিল্প খাত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ না হলে প্রণোদনা দেওয়া হোক অথবা ঋণ আদায়ের আদেশ স্থগিত করা হোক। সবাই শুধু লাভের দিকটাই দেখছে, ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনা করছে না। রাজিব হায়দার বলেন, গ্যাসের দাম ১৬ থেকে ৩১ টাকা হলেও আমরা এখনও গ্যাস পাচ্ছি না। গ্যাস সরবরাহ কতদিন স্থিতিশীল থাকবে, বাজেটে সেটির কোনও উত্তর নেই।
বিকেএমইএ সহসভাপতি আখতার হোসেন অপূর্ব জানান, দাম বেড়েছে তবুও আমরা সংকটে রয়েছি। গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন ও উৎপাদনে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। ড. মোয়াজ্জেম বলেন, আগের সরকার জ্বালানি খাতে অনেক বিনিয়োগ করলেও অপচয় ও দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল আসেনি। অন্তর্বর্তী সরকার সুশাসনের মাধ্যমে খাতটির কাঠামোগত পরিবর্তনে গুরুত্ব দেবে বলে আশা রাখছি।
মূল প্রবন্ধে হেলেন মাশিয়েত প্রিয়তি জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বর্তমানে আটটি বড় সংকটে রয়েছে, যার মধ্যে আর্থিক সংকট, গ্যাস ঘাটতি ও ভুল দামের সমন্বয় অন্যতম। পাশাপাশি, বাংলাদেশ শূন্য কার্বন নিঃসরণের লক্ষ্যের বিপরীতে এগোচ্ছে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারের আগ্রহও সীমিত।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta