যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা আরও বিস্তৃত করলো
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা ফেডারেল বিচারকদের উপর সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে অবৈধ অভিবাসী ও অস্থায়ী ভিসাধারীদের সন্তানদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের যে আদেশ ডোনাল্ড ট্রাম্প জারি করেছিলেন, তা কার্যকর হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তকে 'বিশাল জয়' হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন এমন ব্যক্তি এবং অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করা হবে। এর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল এবং সুপ্রিম কোর্টের রুলিংয়ের পর ট্রাম্পের উদ্যোগের পক্ষে রক্ষণশীল বিচারকরা মত প্রকাশ করেছেন।
তবে তারা বলেছিলেন যে, তারা জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগ নিয়ে মন্তব্য করেননি, বরং তারা প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমের ওপরই আলোকপাত করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রুলিংয়ের ফলে ভবিষ্যতে নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে।
অভিবাসন অধিকার গোষ্ঠী এবং ২২টি রাজ্য ট্রাম্পের প্রথম দিনের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস ও ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ বন্ধ করা, এবং প্রাথমিক পর্যায়ে সাফল্যও পাওয়া যায়। তবে জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর বিরুদ্ধে আপিল করে এবং সুপ্রিম কোর্টে তা সাংবিধানিক বলে প্রমাণিত হয়।
শুক্রবার আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে নতুন আদেশ দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আদালতের আদেশের প্রশংসা করে বলেন, 'এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের পক্ষে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে।'
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পরই ট্রাম্প তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে নির্বাহী আদেশ জারি করেন।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত মানে বিচারকরা ট্রাম্পের নীতি আটকে রাখতে পারবেন না।
তিনি বলেন, অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী সেশন থেকে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি তারা পর্যালোচনা করবে।
সুপ্রিম কোর্টের রুলিং অনুসারে, দেশের আদালত যদি কোনো কার্যক্রমকে অসাংবিধানিক মনে করে তবে তা স্থগিত করতে পারবে। তবে এটি বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে, ফলে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
এখন আদালতের আদেশের কারণে ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ক আদেশটি আদালতের মতামত আসার ৩০ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।
তবে এর বিরুদ্ধে আরো আইনি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করছেন।
নটরডেম ল স্কুলের অধ্যাপক স্যামুয়েল ব্রে বলেছেন, আদালতের এই আদেশ ফেডারেল আদালত ও নির্বাহী শাখার সম্পর্ক পুনঃনির্ধারণ করবে।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মানে হলো, নির্বাহী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না।
বিচারক অ্যামি কোনে ব্যারেট বলেন, ফেডারেল আদালত নির্বাহী শাখার কার্যক্রম তদারকি করে না, বরং তারা মামলা ও বিতর্কের সমাধান করে।
জাস্টিস ব্রেট কাভানফ বলেন, যদি ফেডারেল এবং নির্বাহী শাখার মধ্যে আইনি সমস্যা তৈরি হয়, সুপ্রিম কোর্ট এসব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিচার সোনিয়া সোটোমেয়র তার মতামত ব্যক্ত করেন, তিনি বলেন, 'কোর্টের সিদ্ধান্ত সংবিধানকে উপেক্ষা করার জন্য সরকারের জন্য একটি খোলা আমন্ত্রণ ছাড়া কিছুই নয়।'
তিনি আরও লেখেন, 'আইনের শাসন কাউকে দেয় না, এটি এমন একটি নীতি যা প্রতিটি শাখা তার টিকে থাকার জন্য লড়াই করে। আদালত আজ সে প্রচেষ্টায় নিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ত্যাগ করল। প্রেসিডেন্ট আমাদের সংবিধানকে উপহাস করেছেন।'
সূত্র: বিবিসি
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta