যবিপ্রবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ১১ মাস পরেও হয়নি বিচার
জুলাই বিপ্লবের ১১ মাস পেরিয়ে গেলেও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রশাসন শিক্ষার্থী নির্যাতন ও হত্যার হুমকির অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো বিচার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন ও তাদের চলাফেরা অবাধ করতে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিপ্লবের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
এটি জানা গেছে যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে ২০২৩ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের হল থেকে বের করে দেয়। প্রথম দফায় সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান শিহাব (পিইএসএস), সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হৃদয় (এফবি), রাকিব হাসান (এফবি) ও ফাহিম মোর্শেদ (ফার্মেসি) মারধর করে হল থেকে বের করে দেন।
এরপর গভীর রাতে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়, যেখানে নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকরামুল কবীর দ্বীপ (এফএমবি)।
অভিযুক্তদের মধ্যে রাকিব হাসান এখনো ক্যাম্পাসে অবাধে চলাফেরা করছেন এবং পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, অভিযুক্তদের সহায়তায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে জিইবিটি বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেত্রী আসমা সাদিয়া সূচি-র বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি হল নির্যাতনের পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে দিকনির্দেশনা দিয়ে নির্যাতনকে উৎসাহিত করেছেন। একইভাবে ইইই বিভাগের ছাত্র জহুরুল ইসলাম সাগর আন্দোলনকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে গ্রুপে সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নির্যাতনের শিকার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সামিউল আজিম বলেন, "জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আমি হামলার শিকার হয়েছি এবং হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। পরবর্তীতে বর্তমান ভিসির কাছে অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ভিসি স্যার আমাদের খোঁজও নেননি।"
এছাড়া, টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব বিন মোত্তালিব ছাত্র নির্যাতনের পক্ষ নিলেও এক অদৃশ্য বলয়ের কারণে অবাধে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত ৩ আগস্ট আন্দোলনকারীরা ‘জুলাই বিপ্লব’ স্লোগানে গ্রাফিতি আঁকলে, মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতারা তা মুছে দেয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের “শিবির” বলে সরাসরি হত্যা হুমকি দেয়। এই ঘটনারও বিচার হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, "আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে কিছু ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনার সঠিক তথ্য দিলে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।"
শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta