উত্তর আফ্রিকার নারী কবি ও ভাষাতত্ত্ববিদ
হিজরি সপ্তম শতকে উত্তর আফ্রিকার নামকরা সুফি কবি ও ভাষাবিদ ছিলেন সারা হালবিয়া (রহ.)। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল সারা বিনতে আহমদ বিন উসমান বিন সালাহ হালবিয়া। তিনি উত্তর আফ্রিকার স্বর্ণযুগের একজন প্রতিভাবান কবি, সাহিত্যিক ও আরবি ভাষাবিদ ছিলেন। আরবি ভাষার ইতিহাস, কবিতা, ব্যাকরণ ও অলংকারশাস্ত্রে তাঁর বিশেষ পারদর্শিতা ছিল।
সারা হালবিয়া (রহ.) শুধু একজন সুপরিচিত কবি নন, তিনি একজন দক্ষ চিকিৎসক, হস্তলিপি শিল্পী ও কুটির শিল্পের বিশেষজ্ঞও ছিলেন। নানা ধরনের হস্তশিল্পে তাঁর দক্ষতা প্রশংসনীয় ছিল। তিনি স্বর্ণ দিয়ে শিল্পকর্ম তৈরি করতেন এবং তাতে বিভিন্ন লেখা ও চিত্র অঙ্কন করতেন। পাশাপাশি তিনি তাসাউফ ও কালামশাস্ত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
লেখক ইবনুল কাজী মিকনাসি উল্লেখ করেছেন, ইবনু সালমুন মরক্কোর ফেজ শহরে সারা হালবিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন এবং তাসাউফের খিরকা পরিয়ে দেন। সারা হালবিয়া তাঁর স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। ইবনুল কাজী তাঁর বিস্তারিত জীবনীও রচনা করেছেন।
সারা হালবিয়া বিভিন্ন রাজা, বাদশাহ ও শাসকের দরবারে সফর করেছেন। তাঁর সফরকৃতদের মধ্যে আফ্রিকার শাসক মুসতানসির বিল্লাহ হাফসি অন্যতম। তিনি বিখ্যাত রাজপ্রাসাদ আবু ফিহিরে মুসতানসির বিল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করেন। যেখানে তিনি বলেন, পশ্চিম দিগন্ত আপনাদের জন্য উজ্জ্বল হয়েছে, যেমন পূর্ব দিগন্ত হয়েছে; সময় এসেছে আপনার জন্য এবং যুগ আপনাদের নিয়ে আনন্দ করছে।
রাজত্ব, মর্যাদা, গর্ব ও গৌরব সবকিছুই আপনার ভাগ্যে জুটেছে। সারা হালবিয়ার কবিতার ছন্দ, ভাষা ও অলংকার মুসতানসির বিল্লাহকে মুগ্ধ করে। তাই তিনি তাঁকে সম্মান ও মূল্যবান পুরস্কার দিয়ে বিভিন্ন সফরে সঙ্গী করেন। সারা হালবিয়া এক বছর মুসতানসির বিল্লাহর আতিথ্য গ্রহণ করেন।
এরপর সারা হালবিয়া আন্দালুস বা মুসলিম স্পেনে যান। সেখানে তিনি আমির আল মাজিদ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যিনি একজন ফকিহ, কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। সারা হালবিয়া তাঁর সম্মানে আবৃত্তি করেন,
হে বাদশাহ! আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল। আপনার মর্যাদা, ক্ষমতা ও আল্লাহর সাহায্য চিরস্থায়ী হোক। আমি দেখতে পাচ্ছি যুগ আপনার ইচ্ছার সেবায় নিয়োজিত এবং আপনি যা চান তা পূরণে সক্ষম। নব প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের জন্য সৌভাগ্য এসেছে যা মজবুত করেছে সৌভাগ্যের ঘরকে।
আমির আল মাজিদ আবু আবদুল্লাহ তাঁর কবিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে উপযুক্ত সম্মান ও উপহার দিয়ে সারা হালবিয়াকে বরণ করেন। স্পেনে তিনি কবি, সাহিত্যিক ও ভাষাবিদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কবিতা সহ বিভিন্ন শাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করেন।
তাঁদের মধ্যে ছিলেন, লেখক আবু আবদুল্লাহ ইবনুল মুরাবিত, ফকিহ আবু আবদুল্লাহ দাররাজ, কাজী আবু উমাইয়া দালালি, নাহুবিদ আবু মুহাম্মাদ সাল্লাসের। কিছু ঐতিহাসিক লেখেন, সারা হালবিয়া এই গুণীজনদের সঙ্গে সুবতা (আধুনিক সিউটা) শহরে সাক্ষাৎ করেন এবং এখানে তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো রচনা করেন। নাহুবিদ আবু মুহাম্মাদ সাল্লাসের সঙ্গে তাঁর তর্কবিতর্ক হয় এবং তিনি তাঁর পাণ্ডিত্য দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন।
পরে সারা হালবিয়া (রহ.) আমির ইউসুফ বিন আবদুল হক মারিনির সঙ্গে মারাকেশে সাক্ষাৎ করেন। সেইদিনই তিনি মরক্কোর মারাকেশ শহরে পৌঁছান। তিনি আমির ইউসুফের প্রশংসায় কবিতা লেখেন, তাকে অগ্রাধিকার উপহার দেন এবং বিশেষ মর্যাদা দেন। তারপর ফেজ শহরে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর মৃত্যু হয় (লিবিয়ার) আল বায়দা শহরে।
সূত্র : শাহিরাতুত তিউনিসিয়্যাত ও মুজামুশ শুআরাইল আরব
প্রকাশিত: | By Symul Kabir Pranta